× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নতুন জিএসপি নিয়ে চাপে বাংলাদেশ

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:২৬ পিএম

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৩২ পিএম

নতুন জিএসপি নিয়ে চাপে বাংলাদেশ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপিতে নতুন প্রস্তাবিত সুরক্ষামূলক পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) খুচরা ও পাইকারি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা ইউরোকমার্স। 

ইউরোপের দেশগুলোর খুচরা এবং পাইকারি খাতে ৫০ লাখের বেশি কোম্পানির প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থাটি ইতোমধ্যে ইইউ কর্তৃপক্ষকেও তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তাদের প্রতিনিধিত্বকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাকও রয়েছে। 

জানা যায়, ইইউ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। বাংলাদেশ ২০০১ সাল থেকে এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) স্কিমের আওতায় ইইউয়ের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ আসে ইইউয়ের দেশগুলো থেকে। ওই অঞ্চলে বাংলাদেশ বছরে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে আসছে।

ইউরোকমার্স আরও বলছে, বাংলাদেশে আনুমানিক ৪০ লাখ লোক পোশাক খাতে কাজ করে, যার অধিকাংশই নারী। নতুন প্রবিধান বাস্তবায়নে এ শ্রমিকগোষ্ঠী ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। তাই তাদের জন্য স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখা উচিত। অন্যথায় দেশের জিডিপিতে ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে পণ্য না নিয়ে অন্যত্র চলে যাবে। ফলে তারা আশঙ্কা করছেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য প্রণোদনা কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার পাওয়ার প্রকৃত সম্ভাবনা খর্ব করবে। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমে গড়ে ওঠা শিল্পে গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। 

সংস্থাটি বলছে, যদি প্রস্তাবিত নিয়মগুলো অপরিবর্তিত থাকে, তবে বাংলাদেশ ইইউয়ের বাজারে তার পোশাক পণ্যগুলোর জন্য মোস্ট-ফেভারেড নেশন (এমএফএন) শুল্ক এবং শূন্য-শুল্ক সুবিধা স্থগিত করতে পারে।

ইউরোকমার্স প্ল্যাটফর্মটি ইতোমধ্যে নতুন জিএসপি প্রবিধান নিয়ে আলোচনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে। সেই সঙ্গে তারা আশঙ্কা করছে এর ফলে কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিক চাকরি হারাতে পারেন। উপরন্তু ইইউয়ের প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো এ খাতের টেকসই উন্নয়নকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাই ইউরোকমার্স আর বিলম্ব না করে ইইউকে নতুন প্রবিধান নিয়ে সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।

ইউরোকমার্স আশা প্রকাশ করেছে, ইইউয়ের নতুন জিএসপি প্রবিধান প্রস্তাবের কারণে বাংলাদেশের ওপর আসা সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব প্রশমিত করতে প্রযুক্তিগত সমাধান বিবেচনা করতে পারে।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে ২০২৯ সালের পর ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বজায় রাখা বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য।

তাই ইউরোকমার্স পরামর্শ দিয়ে বলছে, স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো সক্রিয় করার আগে যে দেশগুলো জিএসপি প্লাস নিয়ে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন গ্রুপে যোগ দেবে, তাদের জন্য একটি ট্রানজিশন পিরিয়ড চালু করা উচিত, যাতে সুবিধাভোগী দেশগুলো এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য আরও সময় দেওয়া উচিত।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, আরএমজি পণ্যগুলোতে স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে নির্দিষ্ট সীমারেখার প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ থেকে বর্তমান ৪৭ শতাংশের স্তরে বৃদ্ধি করলে এসব আমদানি খাত সংকুচিত হয়ে পড়বে।

প্রস্তাবিত জিএসপি প্রবিধান সঙ্গে যদি এস-১১ বি পণ্যের (সম্মিলিত এইচএস সেকশন ৬১, ৬২ এবং ৬৩-এর মধ্যে, নিটওয়্যার এবং হোম টেক্সটাইল আইটেম সমন্বিত) আইটেমগুলো রয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ইইউতে বাংলাদেশের রপ্তানির শেয়ার প্রায় ৫০ শতাংশ বলে অনুমান করা হয়। এর অর্থ হলো উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। 

এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইউরোপীয় কমিশনকে সংলাপের জন্য অনুরোধ করেছিল। সেখানে যুক্তি দিয়ে দেখানো হয়েছিল যে, প্রস্তাবিত সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো এইচএস ধারা ৬১, ৬২ এবং ৬৩-এর অধীনে নিটওয়্যার এবং হোম টেক্সটাইল পণ্যগুলোর রপ্তানিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।

তিনি আরও বলেন, যদি কোনো দেশ থেকে এই পণ্যগুলোর সম্মিলিত অংশ ইইউয়ের আমদানির ৬ দশমিক শূন্য শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো অপসারণের জন্য চিহ্নিত করা হবে। নতুন জিএসপি নিয়মের বিধান অনুসারে এই আইটেমগুলো বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।

যদি প্রস্তাবিত নিয়মগুলো অপরিবর্তিত থাকে এমনকি বাংলাদেশ ২০২৩-পরবর্তী জিএসপি প্রবিধানে জিএসপি প্লাস অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার থেকে উপকৃত হবে। তাহলে পোশাক পণ্যগুলো ইইউয়ের এমএফএন ট্যারিফ হারের মুখোমুখি হবে। বাংলাদেশ থেকে ইইউতে পোশাক পণ্য শূন্য শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ গড় শুল্ক বৃদ্ধির সম্মুখীন হবে।

সুইডেনে বাংলাদেশ মিশন সম্প্রতি পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইউরোকমার্স চিঠি পাঠিয়েছে। একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা সুরক্ষা ব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের পক্ষে পরিবর্তন খুঁজছে। ইউরোকমার্স উদ্বিগ্ন নতুন জিএসপি শুধু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর জন্যই নেতিবাচক হবে, তা নয় সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করবে।

ইউরোকমার্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ক্রিস্টেল ডেলবার্গে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা আশঙ্কা করি যে, বাংলাদেশের শিল্প খাতের সংস্কারে প্রণোদনা হ্রাসের ঝুঁকি রয়েছে, যা ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার পাওয়ার সম্ভাবনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কয়েক বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমে বিকশিত কিছু শিল্প খাতও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’ 

এ ব্যাপারে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘জিএসপি প্লাস নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু করতে হবে। তা না হলে ২০২৩ সালের পর আমাদের রপ্তানি ইউরোপের দেশগুলোতে কীভাবে হবে, তা নিয়ে ভাবনার বিষয় আছে। ইউরোকমার্স এ বিষয়ে বলার অনেক আগে থেকেই আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ কথা বলে আসছি।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা