ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫৩ পিএম
মেশিনের সাহায্যে ভুট্টা ভাঙ্গিয়ে তা বস্তায় ভরছেন কৃষকর। প্রবা ফটো
চলতি মৌসুমে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাম্পার ফলনের পরও দাম পড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
৮০ কেজি ওজনের বস্তায় দাম কমেছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। অথচ ১৫ দিন আগেও একই ওজনের প্রতিবস্তা ভুট্টা ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন সেই ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
এদিকে ভুট্টার দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদিত ভুট্টা বিক্রি নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন উপজেলার চাষিরা। ভুট্টার দাম বাড়বে এমন আশায় ফসল ঘরে তুলছেন না চাষিরা। ফলে মাঠের পর মাঠ ভুট্টার শুকনো গাছে পড়ে রয়েছেন পাকা ভুট্টার মোচা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে ভুট্টা চাষে আশানুরূপ ফলন ও লাভবান হওয়ায় অনেক চাষি ধান ও আলু আবাদ বাদ দিয়ে একই জমিতে ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। তাই এ বছর উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ৩ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তাই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৭৬ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করে উৎপাদন হয়েছিল ৩৯ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন।
উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের রাজামারপুর, দাদপুর, আমডুঙ্গি, পাঠকপাড়া, পলি শিবনগর, আলাদিপুর ইউনিয়নের উত্তর আলাদিপুর, রাঙামাটি, বলরামপুর, বারাইহাটসহ খয়েরবাড়ী, দৌলতপুর ও এলুয়ারি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু এলাকার কৃষক ক্ষেতের ভুট্টা ভাঙার জন্য কৃষিশ্রমিক লাগালেও বেশিরভাগ ক্ষেতেই আধাপাকা ভুট্টা পড়ে রয়েছে গাছের সঙ্গে।
পলি শিবনগর গ্রামের ভুট্টাচাষি মামুন সরকার বাবু বলেন, ‘১৫ বিঘার মতো জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। কিন্তু শেষ সময়ে দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদিত ভুট্টা নিয়ে বিপাকে পড়েছি। বাজারে বর্তমানে ভুট্টার যে দাম, তাতে ক্ষেতের ভুট্টা তুলে বাজারে বিক্রি করলে লোকসান না হলেও লাভ কিছুই হবে না। এজন্য সামান্য কিছু জমির ভুট্টা তোলা হলেও অন্যগুলো ফেলে রেখেছি দাম বাড়বে এমন আশা নিয়ে।’
একই এলাকার বর্গাচাষি নওশাদ আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করে ফলন আশানুরূপ হলেও দাম না পাওয়ায় হতাশায় পড়তে হয়েছে। দাম বাড়বে এমন আশায় ভুট্টা ক্ষেতেই রেখে দিয়েছি। তবে ঝড়বৃষ্টি হলে এই দামের মধ্যেও লোকসানে পড়তে হবে।
একই ইউনিয়নের পুরাতন বন্দর এলাকার কৃষক মামুনুর রশীদ বলেন, ১৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছি। গত ১৫ দিন আগেও ৮০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ভুট্টা ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন একই ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। ভুট্টার দাম ভালো না হওয়ায় ক্ষেতের ভুট্টা ভাঙা নিয়ে একটু সময় নিচ্ছি।
দাদপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। এর মধ্যে তিন বিঘা জমির ভুট্টা তুলে ৮৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। সরকারিভাবে ভুট্টার দাম নির্ধারণ না করায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ভুট্টার ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
আমডুঙ্গিহাটের পাইকার ভুট্টা ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকার ব্যবসায়ীরা না আসায় ভুট্টার দাম কমে গেছে। গত ১৫ দিন আগেও প্রকারভেদে পালোয়ান জাতের ৮০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ভুট্টা ২ হাজার ১০০ টাকা এবং দুর্জয় জাতের প্রতি বস্তা ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে। বর্তমানে সেই ভুট্টা এখন ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা বস্তা হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমদানিও কমে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, এ বছর ফুলবাড়ীতে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসায় বাম্পার ফলনও হয়েছে।