গাইবান্ধা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৩৩ পিএম
প্রবা ফটো
গাইবান্ধার চরাঞ্চলে মিষ্টি কুমড়ার ব্যাপক ফলন হয়েছে। খরচ কম ও ফলও হয়েছে ভালো। প্রতিদিন জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে অন্তত ৭ হাজার পরিবার তাদের প্রতিদিনের সংসার খরচ মেটাতে পারছেন। উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া গাইবান্ধার বাজার মিটিয়েও ট্রাকে ভর্তি করে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
১৬৫টি বিস্তীর্ণ বালুচরজুড়ে চাষ হয়েছে দুই জাতের মিষ্টি কুমড়া। বালুচরে উৎপাদিত কুমড়া দেড় কোটি টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশার আলো দেখছেন গাইবান্ধার ৪ উপজেলার চরাঞ্চলের অন্তত ১০ হাজার পরিবার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ৪১০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। এর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে কমপক্ষে ১৩ হাজার ১২০ মেট্রিকটন। বাজারে যার পাইকারি মূল্য ১ কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার টাকা ।
কামারজানি বন্দরের বাসিন্দা মিষ্টি কুমড়া চাষি আব্দুর রশিদ জানায়, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ বালুচরজুড়ে চাষ হয়েছে বিট কুমড়া ও স্থানীয় নানান জাতের মিষ্টি কুমড়া। চর হরিচন্ডি, চরমানিককর, গোঘাট, কড়াইবাড়ি, লালচামার, পোড়ারচর , শ্রীপুর, বেলকা, হরিপুর, ভরতখালী, কুন্দেরপাড়ার চর, চর সিদাই, চর হলদিয়া, উড়িয়াসহ বালুচরের আধুনিক উপায়ে এই মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগান কৃষকরা।
বালুচরে গর্ত খুঁড়ে বালুর গভীরে বীজ বপন করা হয়। তারপর চারা বড় হলে বালুচরজুড়ে গাছের ডালপালা ছড়িয়ে দিতে হয়। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় মিষ্টি কুমড়ার ফলন। ডিসেম্বর শেষ দিকে মিষ্টি কুমড়ার বাজারে বিক্রি হতে শুরু করে।
ব্রহ্মপুত্র নদের বালুচরের নাম ধুতিচোরা। এই ধুতিচোরা গ্রামের আফসার মোল্লাহ। নদ ভেঙে পরিবার পরিজন নিয়ে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পশ্চিম তীরে বাস করছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। কিন্তু নদে জেগে ওঠা বালুচর। এই বালুচরে সেচ দিয়ে ৯ বিঘা জমিতে চাষ করেছে মিষ্টি কুমড়া । এবার মিষ্টি কুমড়ার ফলনও হয়েছে ভালো। খরচ কম কিন্তু লাভ বেশি।
তাই স্থানীয় কৃষক আফসার মোল্লাহ ৯ বিঘা জমি থেকে ৩ কেজি অথবা ৪ কেজির বিট কুমড়া বিক্রি করেছেন অন্তত ৪০ হাজার টাকা। জমিতে দেশি জাতের বড় বড় মিষ্টি কুমড়া ও বিট কুমড়া যা আছে তাতে আরও ২ লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে। তাতে তার লাভের অংশ ঘরে জমা হবে অন্তত ২ লাখ টাকা ।
চর কড়াইবাড়ির বাসিন্দা বিধবা ময়না বেগম তার তিন ছেলে মেয়েদের নিয়ে বালুচরে বাস করেন। ঘরবাড়ি করেও যা জমিজমা ও বালুচর আছে তাতে নানা ফসল করে বছর কেটে যায়। এ বছর তিন ছেলেকে নিয়ে ময়না বেগম মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন ৪ বিঘা বালুচরে। নিজেদের পরিশ্রম দিয়ে চাষ করায় খরচ হয়েছে কম। কিন্তু চলতি জানুয়ারি মাসে তিনি তার জমির দেড় হাজার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন ফুলছড়ি হাটে। প্রতিটি বিট কুমড়া ৩০ টাকা হিসাবে নগদ হাতে এসেছে ৪৫ হাজার টাকা ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খাতাপত্রে বলা হয়েছে, চরাঞ্চলের মিষ্টি কুমড়ার ব্যাপক চাষ হয়েছে। খরচ কম ও ফলও হয়েছে ভালো। প্রতিদিন জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে অন্তত ৭ হাজার পরিবার তাদের সংসার খরচের টাকা হাতে আসছে। তাদের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া গাইবান্ধার বাজার মিটিয়েও ট্রাকে ভর্তি করে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, চরাঞ্চলের বালুচরে এখন সোনা ফলে। বিভিন্ন রঙবেরঙের মিষ্টি কুমড়া বালুচরের বালুকে সমৃদ্ধ করেছে। কৃষকরা বালুচরের মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে মুনাফা করতে পারছেন।