প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৪৬ পিএম
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:১১ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
এবার উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেল বাণিজ্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক জোট ওপেক প্লাস। আর তাতেই হঠাৎ করে বেড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম।
সোমবার (৩ এপ্রিল) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৮৪ ডলারে লেনদেন হয়েছে। একই জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট- ডব্লিউটিআই ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৯ ডলার ৭৯ সেন্টে অবস্থান করছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সমস্ত অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে ওপেক প্লাস। তবে এবার উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়াসহ এর মিত্রদের এই সংগঠন। সৌদি আরব, ইরাক এবং বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়াও বলছে তারা প্রতিদিন ৫ লাখ ব্যারেল কম জ্বালানি তেল উৎপাদন করবে। তবে তেলের দাম কমিয়ে আনতে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে ব্যাপক হারে বেড়েছিল জ্বালানি তেলের দাম। গত বছর জ্বালানির দামের সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও অনেকখানি বেড়ে গিয়েছিল। এমনকি দাম বাড়ার হার এতটাই তীব্র ছিল যে অনেক পরিবারের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল।
তবে আবারও তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতি বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়ায়েল সেলফিন। তিনি বলেন, ’তেলের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি কমানোর যুদ্ধকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। তবে তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবারের জ্বালানি খরচ খুব একটা বাড়বে না। কারণ জ্বালানির মূল্যমান নির্ধারণ করা আছে। তা থেকে জনগণ উপকৃত হবে।’
তবে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ’জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পরিবহন খাতের ওপর সবচেয়ে বেশি পড়বে। পরিবহন খরচ বাড়লে অন্যান্য খরচও বাড়বে। যার প্রভাবে মূল্যস্ফীতি কমতে বেশি সময় লাগবে।’
তবে জ্বালানি তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলে মনে করেন না যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘বাজারের অনিশ্চয়তার কারণে আমরা এই মুহূর্তে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তকে যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি না। এরই মধ্যে এ বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি।’
এদিকে সৌদি সরকারি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, সৌদি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই পদক্ষেপ তেল বাজারের স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করার লক্ষ্যে একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
তবে জ্বালানি তেলের বাজার বিশ্লেষক নাথান পাইপার বলেন, ’ওপেক প্লাসের এই পদক্ষেপ মধ্যমেয়াদে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের ওপরে রাখার প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব জ্বালানি তেলের বাজারে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে গত বছরের অক্টোবরে প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল ওপেক প্লাস। তবে সে সময় সংগঠনটির এমন সিদ্ধান্তকে অদূরদর্শী বলে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার আহ্বানের পরও সে সময় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ঘাটতি দেখা দেয়। সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে। উচ্চদামের একপর্যায়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল।
সূত্র : বিবিসি