আনিছুর রহমান
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩ ১৬:০৬ পিএম
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৩ ১৬:০৬ পিএম
নানা সংকটের পরও মুনাফা করছে কাগজ ও প্রিন্টিং খাতের কোম্পানিগুলো। সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ছয়টি কোম্পানির মধ্যে তিনটির প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে মুনাফা বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে। আর দুইটি কোম্পানির লোকসান আগের চেয়ে কমেছে। মাত্র একটি কোম্পানির আগের বছরের চেয়ে মুনাফা কমে গেছে।
শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বেড়েছে এখাতের এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড। আর ইপিএস কমে যাওয়া একমাত্র কোম্পানি হচ্ছে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড।
সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস : কাগজ খাতের এই কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। কিন্তু ২০০৯ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলমার্কেট থেকে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে স্থানান্তর করা হয়। নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থতার কারণে ওটিসিতে পাঠানো হয়েছিল সোনালি পেপার মিলসকে। পরবর্তীতে লভ্যাংশ প্রদানে নিয়মিত হওয়ায়, ২০২০ সালে ফের মূল মার্কেটে উঠে আসে। গত দুই বছরে মুনাফা ও শেয়ারের দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে এই কোম্পানিটির। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর,২০২২) সোনালি পেপারের ইপিএস বেড়েছে ৩ টাকা ৩২ পয়সা বা ৮৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানি মুনাফা করে ৭ টাকা ২ পয়সা। মুনাফায় উল্লম্ফনের সঙ্গে বেড়েছে শেয়ার দরও। এখনও দ্বিতীয় প্রান্তিকের হিসাব প্রকাশ করেনি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। গত দুই বছরে শেয়ারটির দর ১৬৫ টাকা থেকে ৯৬৫ টাকায় উঠেছিল। বর্তমানে শেয়ারটি ৬৪১ টাকা ৫০ পয়সা লেনদেন হচ্ছে।
বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফেকচারিং : ১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। ৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটিও ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফিরে ২০২১ সালে। গত দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ও শেয়ারের মূল্যে বড় ধরনের উত্থান হয়েছে। হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ১৫ পয়সা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১৪ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে মুনাফার পরিমাণ বেড়েছে ২ টাকা ১ পয়সা বা ১৭৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। এই শেয়ারটিও গত বছর মূলমার্কেটে ফিরে ৫০ টাকা থেকে ৪৬৩ টাকায় উঠেছিল। বর্তমানে শেয়ারটির দাম ২৪২ টাকা ৯০ পয়সা।
বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড : ২০১৮ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড। বিডিংয়ের মাধ্যমে শেয়ার দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করেছিল যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। তবে ১০ শতাংশ কমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি আইপিও মাধ্যমে ৭২ টাকা করে কিনেছে। পরবর্তীতে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় কমে গেলে সম্প্রতি মুনাফা ঊর্ধ্বমুখী হয়। হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে বসুন্ধরা পেপার মিলসের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৭৫ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ৪ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে শেয়ারটির মুনাফা বেড়েছে ৭১ পয়সা বা ৬৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বরে শেয়ারটির দর ১২৬ টাকা উঠলেও বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৭৬ টাকা ৫০ পয়সায়।
পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড : ১৯৯০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। ২০২১ সালে ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে ফিরে আসে মাত্র ১০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটি। কাগজ ও প্রিন্টিং খাতের ৬টি কোম্পানির মধ্যে চলতি হিসাব বছরে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মুনাফা কমেছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৭৯ পয়সা। যা আগের বছর ওই সময়ে লোকসান ছিল ২ টাকা ১২ পয়সা। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে মুনাফা কমেছে ৩৩ পয়সা। আয় কমে যাওয়ায় শেয়ারটি বর্তমানে ফ্লোর প্রাইস ১৬৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।
হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস : স্বল্পমূলধনী এই কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০১ সালে। গত ২ বছর টানা লোকসান করা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ করে লভ্যাংশ প্রদান করছে হাক্কানি পাল্প। ফলে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ডিএসইর ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। সবশেষ হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৮২ পয়সা। যা আগের বছর ওই সময়ে লোকসান ছিল ৮৬ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে লোকসান কমেছে ৪ পয়সা। গত বছরে শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হলেও বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৫৮ টাকা ৫০ পয়সায়।
খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং : ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। তালিকাভুক্তির পর প্রথম দুই বছর
বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ প্রদান করে ডিএসইর ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত হয়। পরবর্তী ধুঁকতে থাকে কোম্পানিটি। মাঝের বছরগুলোতে দুই বছর নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও শেষ দুই বছর কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ পয়সা। যা আগের বছর ওই সময়ে লোকসান ছিল ১ টাকা ৯৬ পয়সা। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে লোকসান কমেছে ১ টাকা ৯০ পয়সা। ইপিএস নেতিবাচক থেকে ইতিবাচকের দিকে ধাবিত হলেও বর্তমানে শেয়ারটি ফ্লোর প্রাইস ৮ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।
সোনালি পেপার কোম্পানির সেক্রেটারি রাশেদুল হোসাইন জানান, কোভিড পরবর্তীতে তার প্রতিষ্ঠানের বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। বিশ্ববাজারে সঙ্গে স্থানীয় বাজারে তার প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই মুনাফা আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। আর বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফেকচারিং লিমিটেডের কোম্পানির সেক্রেটারি জানান, মুনাফা বাড়ার কোনো ব্যাখ্যা তার জানা নেই। তাই এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।