প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ২০:৫৩ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩ ২১:০৮ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে পরপর দুটি ব্যাংকে ধস নামায় আর্থিক খাতে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ অস্থিরতা দ্রুতগতিতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় এর প্রভাব পড়েছে ইউরোপ এবং এশিয়ার দেশগুলোতে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) বন্ধ হওয়ার বিষয়টি এখনও মেনে নিতে পারছে না দেশটির ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। হঠাৎ ব্যাংকটি বন্ধ হওয়ার জন্য এসভিবির নির্বাহী, ফেডারেল রিজার্ভ সুপারভাইজারসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সংসদ সদস্যদের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলছে ফেড। তবে এসভিবির পতনের জন্য ফেডের দায়িত্বহীনতাকেই দুষছেন সংসদ সদস্যরা।
এসভিবির পতনের কয়েকদিন পরেই সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে ফেডের সুপারভিশন বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান মাইকেল বার বলেন, ‘আমি মনে করি যেকোনো সময় ব্যাংক খাতে এমন ধাক্কা আসতে পারে। তবে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে। এর সুপারভাইজাররা ব্যর্থ হয়েছেন, সেই সঙ্গে ব্যর্থ হয়েছেন আমাদের নীতিনির্ধারকরা।’
এদিকে মার্চের শুরুতে এসভিবির আমানতকারীরা এক দিনে প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। যার ফলে বিস্ময়করভাবে আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোতে অর্থ ঘাটতি দেখা দেয়। এ বিষয়ে মাইকেল বার বলেন, ‘এটি একটি অবিশ্বাস্য স্কেল। অর্থ উত্তোলনের এমন গতি আমি কখনও দেখিনি।’
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উভয় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা চাপ তৈরি করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন মাইকেল বার। তিনি বলেন, ‘উভয় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা আমাকেসহ ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনের (এফডিআইসি) প্রধান মার্টিন গ্রুয়েনবার্গ এবং ট্রেজারি বিভাগের সেক্রেটারি নেলি লিয়াংকে চাপ দিয়েছিলেন। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কেন দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে না, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছিলেন।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থসেবা বিভাগের সভাপতি ও রিপাবলিকান নেতা প্যাট্রিক ম্যাকহেনরি বলেন, ‘ফেড কখন এবং কীভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল তা এখনও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। প্যানেল হিসেবে তাদের অনেক উত্তরের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এমনকি তাদের জবাবদিহির অভাব রয়েছে, যা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়।’
তবে এ বিষয়ে মাইকেল বার বলেন, ’তিনি ৯ মার্চ বিকালে এসভিবির চাপের বিষয়ে প্রথম জানতে পেরেছিলেন। যদিও সেদিন সকালেই এসভিবির পক্ষ থেকে সুপারভাইজারদের জানানো হয়েছিল তাদের আমানত স্থিতিশীল রয়েছে।’
এসভিবির সুদের হার এত বেশি ছিল না, যা তাদের পতনের কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ডেমোক্র্যাট দলের নেতা জুয়ান ভার্গাস। তিনি বলেন, ’প্রধান ঝুঁকি কর্মকর্তা ছাড়া কয়েক মাস চলেছে এসভিবি। তাই তাদের সুদের হারের ঝুঁকির মডেল নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু তাদের সুদের হার এমন আক্রমণাত্মক ছিল না যা পতনের কারণ হতে পারে।’
এদিকে ফেড এবং এফডিআইসি উভয়ই আগামী ১ মের মধ্যে এসভিবির ব্যর্থতার বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফেড ব্যাংকটির তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এবং এফডিআইসি আমানত বীমাকে কেন্দ্র করে তাদের রিপোর্ট তৈরি করবে।
উল্লেখ্য, আর্থিক খাতের অস্থিরতার মধ্যেই ব্যাংকঋণে আবারও সুদের হার বাড়িয়েছে ফেড। ব্যাংক খাতের বিদ্যমান অস্থিরতা এবং দুটি ব্যাংকের পতনের পরও সুদের হার বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার ৪ দশমিক ৭৫ থেকে বেড়ে ৫ শতাংশ হয়েছে।
তবে ফেডের এমন সিদ্ধান্ত ব্যাংক খাতকে অস্থির করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে ফেড সুদের হার বাড়িয়েছে। তবে তাদের এমন সিদ্ধান্তের ফলে সামনের মাসগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়ে ফেড বলছে, এ সিদ্ধান্ত ব্যাংক খাতের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
সুত্র : রয়টার্স