প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩ ২২:৩৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
দুনিয়াজুড়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। যতই দিন গড়াচ্ছে প্রযুক্তির ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা তত বাড়ছে। এটি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে ব্যাপকভাবে এআই ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, প্রযুক্তির এই বিশেষ সুবিধা জীবনকে যেমন সহজ করেছে তেমনি বিপদেও ফেলতে পারে। দ্রুতগতিতে এআইয়ের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বের ৩০ কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্সস।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এআইয়ের প্রভাব বিভিন্ন খাতে ভিন্ন হবে। প্রশাসনিক কাজের ৪৬ শতাংশ, আইনগত পেশায় ৪৪ শতাংশ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে করা যেতে পারে। একই সঙ্গে নির্মাণ খাতের ৬ শতাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে মাত্র ৪ শতাংশ কাজ চলে যাবে এআইয়ের দখলে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে বর্তমানে যেসব চাকরি আছে তার চার ভাগের এক ভাগ চলে যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলে। এর সঙ্গে এটি নতুন চাকরি এবং উৎপাদনও বাড়াবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের সরকার এআইয়ের ওপর বিনিয়োগের ব্যাপারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে আগ্রহী। সরকারের মতে, ‘এআই পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অগ্রগতি আনবে এবং তারা এটির প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’
যুক্তরাজ্যের তথ্যমন্ত্রী মিশেলে ডোনেলান সংবাদমাধ্যম দ্য সানকে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করতে চাই আমরা যুক্তরাজ্যে যেভাবে কাজ করি সেখানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স পরিপূরক, এটি কাজের ক্ষতি করছে না বরং চাকরি নেওয়ার বদলে আমাদের কাজকে সহজ করছে।’
এদিকে গোল্ডম্যান স্যাক্সস আরও জানিয়েছে, বিশ্বে যেসব পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয়, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে সেটির বার্ষিক মূল্য আরও প্রায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া মানুষ যেসব পণ্য তৈরি করে হুবহু সেই একই পণ্য তৈরি করতে পারে এআই। এটি বিশ্বের জন্য ‘বড় অগ্রগতি’।
ওপেনএআইয়ের তৈরি পাঠ্যভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি গদ্য, কবিতা এমনকি কম্পিউটার কোডের খসড়া তৈরি করতে পারে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভের পর সবার নজরে আসে। এদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটজিপিটির বিকল্প হিসেবে আর্নিবট চালুর ঘোষণা দিয়েছে চীনের জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন বাইডু।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেইজিংভিত্তিক সংস্থাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবটের নাম দিয়েছে আর্নিবট। তবে এআইয়ের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে অনেকে চাকরি হারাবে জানিয়ে যুক্তরাজ্যের কিছু চিত্রশিল্পী শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় তারা জানিয়েছিলেন, যেসব এআই ছবি আঁকতে পারে, সেগুলো তাদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ফেলে দেবে।
একইরকম কথা বলেছেন অক্সফোর্ড মার্টিন স্কুলের ফিউচার অব ওয়ার্ক পরিচালক কার্ল বেনেডিক্ট। তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কবলে ঠিক কত লোকের চাকরি যাবে এটি জানার কোনো উপায় নেই। তবে অনেক কর্মী চাকরি হারাবেই। চ্যাটজিপিটির কারণেও অনেকের চাকরি চলে যাবে। সাংবাদিকরা আরও বেশি প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে। আপনি জিপিএস টেকনোলজি এবং উবারের মতো প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি বিবেচনা করুন। একসময়ের অভিজ্ঞ ড্রাইভারের লন্ডনের সব রাস্তা চেনার গুরুত্ব কমে গিয়েছে। এর কারণে যারা আগে এ পেশায় ছিল তাদের বড় একটি অংশের বেতন কমে গেল। অর্থাৎ প্রযুক্তির বিস্তারে জ্যেষ্ঠদের বেতন কমে যাওয়া কিন্তু ড্রাইভার কমে যাওয়া নয়। আগামী কয়েক বছরে এআইয়ের উদ্ভাবনী কাজগুলোর ওপর একই প্রভাব ফেলবে।’
এদিকে গোল্ডম্যান স্যাক্সসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ যেসব কাজ ১৯৪০ সালের দিকে করছেন সেগুলোর কোনো অস্তিত্বই ছিল না। তবে অন্যান্য গবেষণা নির্দেশ করছে যে ১৯৮০ সাল থেকে প্রযুক্তিগত যেসব পরিবর্তন এসেছে সেগুলো নতুন কর্মসংস্থানের বদলে মানুষের চাকরি কেড়ে নিয়েছে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে যা হয়েছিল আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণেও যদি একই ব্যাপার ঘটে তাহলে এর প্রভাবে নিকট ভবিষ্যৎ থেকেই চাকরি কমে যাবে।
তবে এটির দীর্ঘকালীন প্রভাবের বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত বলে জানিয়েছিলেন পর্যবেক্ষক সংস্থা রেজ্যুলেশন ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী টর্সেন বেল। তিনি বলেন, ‘সব ধারণাকেই আমলে নিতে হবে। তবে বিষয়টি হতে হবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো।’ সূত্র : বিবিসি