সোহেল চৌধুরী
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫১ পিএম
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫১ পিএম
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার। সংগৃহীত ছবি
প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন সময়ে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো শত শত কোটি টাকা ভোক্তার কাছে থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৫২ দিনেই বাচ্চা ও মুরগির দাম বাড়িয়ে লুট করা হয়েছে ৯৩৬ কোটি টাকা। সাক্ষাৎকারে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে বাচ্চা ও মুরগির উৎপাদন খরচ নির্ধারণের পাশাপাশি পোল্ট্রি উন্নয়ন বোর্ড গঠন জরুরি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সোহেল চৌধুরী।
মুরগির বাজার অস্থির হয়ে ওঠার প্রধান কারণ কী দেখছেন?
সুমন হাওলাদার : মুরগির বাজার এমন অস্থিরতার মধ্যেই থাকবে যত দিন পর্যন্ত বাচ্চার দাম ও মুরগির প্রকৃত উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে না দেওয়া হবে। বাচ্চার দাম সর্বোচ্চ ৪০ টাকা হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মাধ্যমে প্রকৃত মূল্য কত হওয়া দরকার, তা বের করা প্রয়োজন। ফিডের দামের বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচকে যদি স্থির করা না যায়, তবে মুরগির বিক্রয়মূল্য স্থির করা যাবে না।
প্রান্তিক খামারিরা লোকসান গুনছেন অন্যদিকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো লাভ করছে। বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সুমন হাওলাদার : প্রান্তিক খামারিরা লোকসান গুনতে গুনতে খামার বন্ধ করে উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়েছেন। ছোট ছোট খামারিদের লোকসানের প্রধান কারণ করপোরেট গ্রুপগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা। পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেয় করপোরেট কোম্পানিগুলো। প্রান্তিক খামারিরা মুরগি উৎপাদন করলে করপোরেট কোম্পানিগুলো বাজারে দাম কমিয়ে প্রান্তিক খামারিদের লোকসানে ফেলে দেয়। আবার প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদনে না থাকলে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা করে দেয় করপোরেট কোম্পানিগুলো। পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে। একই সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক খামার করেন। এতে করে বাজার করপোরেট গ্রুপের দখলে চলে যাচ্ছে। এর প্রমাণ, বারবার বাজার সিন্ডিকেট। পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ এবং করপোরেট গ্রুপের মুরগি ও ডিম উৎপাদন বন্ধ করতে না পারলে কোনোদিন বাজার সিন্ডিকেট বন্ধ হবে না।
মুরগির বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে কোন কোন দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
সুমন হাওলাদার : আমার পরিষ্কার বার্তা হলো করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড আর বাচ্চা উৎপাদন করবে। আর মুরগি ও ডিম উৎপাদন করবেন খামারিরা। তবেই বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ ছাড়া বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে উদ্যেগ নিতে হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের প্রফেসররা এবং পোল্ট্রি স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে পোল্ট্রি উন্নয়ন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন করতে হবে। এই বোর্ড পোল্ট্রির সব পণ্যের উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে দেবে।
এ পর্যন্ত কতজন খামারি মুরগির ফার্ম করে লোকসানে পড়েছেন? খামারিদের উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সুমন হাওলাদার : এ পর্যন্ত এক লাখ খামারি মুরগি উৎপাদন কার্যক্রমে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন মুরগির দাম বাড়ার প্রধান কারণ প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদনে নেই। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে বাড়ছে মুরগির দাম। প্রান্তিক খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে সব ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভ্যাকসিনসহ সব সুবিধা দিয়ে খামারিদের উৎপাদনে আনতে হবে। বাজার প্রতিযোগিতায় রাখতে হবে। তা না হলে করপোরেটদের দখলে একচেটিয়া বাজার হয়ে পড়বে। এতে সাধারণ ভোক্তারা জিম্মি হয়ে পড়বেন। করপোরেট গ্রুপের ওপর নির্ভর না করে সরকারি হ্যাচারি ও ফিডমিল চালু করতে হবে। মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিড খামারিদের কাছে ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করতে হবে। প্রাণিসম্পদের সব কর্মকর্তা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। প্রাণিসম্পদ অধিপ্তরের বেশ দুর্বলতা রয়েছে। এই অধিদপ্তরের গুটিকয়েক কর্মকর্তার অসাধু পন্থার কারণেই বাজারে সিন্ডিকেট হয়ে বাড়ছে মুরগির দাম।
খামার পর্যায়ে এখন মুরগির দাম ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সুমন হাওলাদার : ফার্ম পর্যায়ে মুরগির দাম নির্ধারণের সুফল ক্রেতারা এখন পাবেন। আমি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এই দাম নির্ধারণে এখন মুরগির দাম সর্বোচ্চ ২২০ টাকা পর্যন্ত হওয়া উচিত। ভোক্তা অধিদপ্তর মূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও প্রাণিসম্পদসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কাজ করছে না। যার নেতিবাচক ফল ভোগ করছেন ভোক্তারা।