প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩ ২১:১৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী ব্যাংক খাতের চলমান অস্থিরতায় উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা। এরমধ্যেই ২৫ বেসিস পয়েন্টে ব্যাংক ঋণে সুদের হার বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এমন সিদ্ধান্তে এখাতের উৎকণ্ঠা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ সুদের হার বাড়ানোর ফলে মার্কিন ডলারের মান বেড়েছে। বরাবরই সুদের হার বাড়ালে অন্যান্য প্রধান মুদ্রা ব্যবহারকারীদের জন্য ডলারের বিনিময়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার সুদের হার বাড়ানোর পরেও অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে ডলারের দাম। যদিও সাত সপ্তাহের সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দাম।
ছয়টি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রার বিপরীতে ডলার সূচক শূন্য দশমিক শূন্য ৭৮ শতাংশ বেড়ে ১০৩ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। গত শুক্রবার ইউরোর সূচক শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ পতনের পর আবার তা শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বেড়ে ইউরো প্রতি ১ ডলার শূন্য ৭ সেন্ট হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান ডলারের দামও শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেড়ে ডলার প্রতি ৬৬ সেন্টে পৌঁছেছে। কিউই মুদ্রা শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেড়ে ৬২ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিটকয়েন শেষ পর্যন্ত শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ বেড়ে ২৭ হাজার ৮৬১ ডলার শূন্য ২ সেন্ট। ইথেরিয়াম সর্বশেষ শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৭৬৩ ডলার ৩৯ সেন্ট হয়েছে৷
এদিকে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দুই ঋণদাতা সিলিকনভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংকের আকস্মিক পতন এবং সুইজারল্যান্ডের বিপর্যস্ত ব্যাংক ক্রেডিট সুইস উদ্ধারের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী ব্যাংক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা দূর করতে সহজ পদক্ষেপ নিয়েছে৷ এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার বিষয়ক সংস্থা ব্যানকবার্ন গ্লোবাল ফরেক্সের চিফ মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট মার্ক চ্যান্ডলার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সরকার এবং বেসরকারি খাতের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য অপর্যাপ্ত।’ একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেবিলিটি ওভারসাইট কাউন্সিল বলছে, কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখনও টেকসই ও স্থিতিস্থাপক আছে। তবে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক রয়েছেন।
এদিকে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক ঋণে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্টে বাড়ানো হলেও সামনে সুদের হার আরও বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের ( ফেড) চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। তবে সুদের হার বাড়ানোর ইঙ্গিত ফেড আগে থেকে দিয়ে আসছিল। সেসময় তারা জানিয়েছিল, সুদের হার বৃদ্ধির এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখার প্রয়োজন হবে। তবে এবার ফেড বলছে, সুদেরহার বাড়ানোর সঙ্গে আরও কিছু অতিরিক্ত নীতি গ্রহণ করতে হতে পারে। ফেডের বিভিন্ন নীতি গ্রহণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি গবেষণা সংস্থা প্যানথিয়ন ম্যাক্রোইকোনমিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়ান শেফার্ডসন বলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো স্পষ্টভাবে সংকেত দেয় যে ফেড নিজেই অস্থিরতায় ভুগছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে গত সপ্তাহে একই ভাবে ব্যাংক ঋণে সুদের হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিদরা তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছেন, এ বছর যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। এমনকি ২০২৪ সালের জন্যও অর্থনীতিবিদরা যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তার থেকেও কম হবে। সেসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ২ শতাংশ।
এদিকে সুদের হার বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাবে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক এবং সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হওয়ার পর এবার অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ব্যাংক ফার্স্ট রিপাবলিক। গত দুই সপ্তাহে ফার্স্ট রিপাবলিকের শেয়ারদর কমেছে ৮০ শতাংশ। যেখানে ফেব্রুয়ারির শুরুতে ফার্স্ট রিপাবলিকের বাজার মূল্য ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি ডলারে। একই ভাবে ২০০টি ব্যাংক পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন সম্প্রতি অস্থিতিশীল বাজার শান্ত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিলেও শঙ্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি এসব ব্যাংক। সূত্র : রয়টার্স