প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩ ২১:০৫ পিএম
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩ ২১:২৮ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ধসে পড়া সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের (এসভিবি) যুক্তরাষ্ট্রের অংশ কিনে নিচ্ছে দেশটির আরেক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনের (এফডিআইসি) ঘোষণা অনুযায়ী, হস্তান্তর চুক্তির অধীনে এসভিবির ১৭টি শাখা মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) থেকে ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংকের অধীনে খুলবে।
তবে যতক্ষণ ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক থেকে অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণভাবে অন্যত্র স্থানান্তরের নোটিস না পাওয়া যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এসভিবির গ্রাহকদের তাদের বর্তমান শাখায় লেনদেন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক উত্তর ক্যারোলিনার রেলেতে অবস্থিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলো কেনার অন্যতম গ্রাহকও এ ব্যাংক। এবার ১ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার ছাড়ে এসভিবির প্রায় ৭ হাজার ২ কোটি ডলারের সম্পদ ও ঋণ কিনেছে ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক। তবে এখনও এসভিবির ৯ হাজার কোটি ডলারের সম্পদের মালিকানা রয়েছে এফডিআইসির।
এফডিআইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসভিবি পতনের কারণে এর বীমা তহবিল থেকে ২ হাজার কোটি ডলার বীমা খরচ মেটাতে হবে।
এদিকে চলতি মার্চের শুরুতে এসভিবির পতন অন্যান্য ঋণদাতাদের স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছিল। এমনকি বিশ্বজুড়ে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দর পতনের কারণও হয়েছিল এটি ৷ ব্যাংক খাতের এই ধারাবাহিক অস্থিরতার মধ্যেই জার্মানির ডয়েচে ব্যাংকের শেয়ারদর ১৪ শতাংশ কমেছে। এতে ইউরোপের ব্যাংক খাতেও তৈরি হয়েছে নড়বড়ে অবস্থা।
এদিকে ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর এসভিবি ও সিগনেচার ব্যাংকের পতন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ইউরোপ ও আমেরিকার গবেষণার প্রধান সারাহ হিউইন বলেন, ’বিনিয়োগকারীদের মধ্যে খুবই উদ্বেগজনক অবস্থা বিরাজ করছে। এই মুহূর্তে বাজারের বাস্তবতার পরিবর্তে প্রচুর তত্ত্ব সামনে আনা হচ্ছে, যা বাজারে প্রভাব ফেলছে।’
এদিকে ব্যাংক খাতের অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, ‘ব্যাংক খাতের অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতার প্রয়োজন ছিল। এটি পরিষ্কার যে আর্থিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকি বেড়েছে।’
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে তীব্র সংকট সামনে এলে চলতি মাসে বিক্রি হয়ে যায় সুইজারল্যান্ডের সমৃদ্ধশালী ব্যাংক ক্রেডিট সুইস। আর্থিক সংকটে থাকা ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণ করে দেশটির আরেক প্রতিষ্ঠান ইউবিএস। আলোচনায় ক্রেডিট সুইসের মূল্য ৮০০ কোটি ডলার চাওয়া হলেও সর্বশেষ তা ৩১৫ কোটি ডলারে হস্তান্তর হয়েছে। ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণের বিষয়ে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বলছে, ক্রেডিট সুইস সচল রাখার চুক্তিটি আর্থিক বাজারের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতিতে ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম পদক্ষেপ।
তবে ক্রেডিট সুইসের অর্থনৈতিক সংকটের খবর এ খাতের অস্থিরতাকে তাতিয়ে দেয়। ক্রেডিট সুইসের অর্থনৈতিক সংকট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে বেশ তৎপরতা দেখা যায় সুইস সরকারের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুরু থেকেই সুইস সরকার ইউবিএসকে ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণে চাপ দিয়ে আসছিল। ফলে গঠনমূলক আলোচনায় বসেছিল ক্রেডিট সুইস ও ইউবিএস।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই ব্যাংকঋণে আবারও সুদের হার বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। ব্যাংক খাতের বিদ্যমান অস্থিরতা এবং দুটি ব্যাংকের পতনের পরও সুদের হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে দেশটিতে সুদের হার ৪ দশমিক ৭৫ থেকে বেড়ে ৫ শতাংশ হয়েছে। তবে ফেডের এমন সিদ্ধান্ত ব্যাংক খাতকে অস্থির করে বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
সূত্র : বিবিসি