× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আমানত বাড়লেও গ্রাহক কমছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৩:১৫ পিএম

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৩:১৫ পিএম

আমানত বাড়লেও গ্রাহক কমছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে

২০২২ সালের শেষ তিন মাসে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের (এনবিএফআই) আমানত পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ব্যক্তি আমানতকারীর সংখ্যা অস্বাভাবিক কমে গেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে এ খাতে ব্যক্তি আমানতকারীর সংখ্যা ৫ লাখ ৭০ হাজার ১৯৬টি থেকে কমে ৫ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯টিতে নেমেছে। ফলে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের মোট আমানতকারী কমেছে ৪৮ হাজার ৬৩৭ জন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, তিনটি কারণে এ খাত থেকে আমানতকারী মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এগুলো হলো- আস্থাহীনতা, সুদের সর্বোচ্চ সীমা আরোপ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি।

তারা বলছেন, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পিপলস লিজিংসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের অনিয়ম, জালিয়াতি এবং যোগসাজশের মাধ্যমে নামে-বেনামে ঋণ বের করে নেওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এ কারণে আগেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা কমেছে মানুষের। এরই মধ্যে এ খাতে আমানত ও ঋণের সুদে সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়তে থাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে মানুষের। এসব কারণে ব্যক্তি আমানতকারীর হিসাব কমে থাকতে পারে।

বর্তমানে দেশে ৩৪টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু আছে। এরমধ্যে তিনটি সরকারি, ১২টি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় এবং বাকিগুলো দেশীয় ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত। এরমধ্যে হাতে গোনা ক

য়েকটি বাদে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই রয়েছে তারল্য সংকটে। অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে, আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে অন্তত ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এখন নাজুক।

জানা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে ঋণে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ এবং আমানতে ৭ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, যা ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে আমানতের সুদের হার বেঁধে দেওয়ার কারণে ব্যক্তি আমানতকারীরা এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯টি, যা ওই বছরের সেপ্টেম্বরেও ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার ১৯৬টি। ফলে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের মোট আমানতকারী গ্রাহক কমেছে প্রায় ৪৮ হাজার ৬৩৭ জন। একই সময়ে শুধু ব্যক্তি আমানতকারী কমেছে ৫১ হাজার ৬৪২ জন। অর্থাৎ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এ খাতে ব্যক্তি আমানতকারীর হিসাব ছিল ৫ লাখ ৪০ হাজার ৯০৬টি, যা গত ডিসেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ২৬৪টি। এরমধ্যে পুরুষ আমানতকারী কমেছে ৩৬ হাজার ৭৮৮ জন আর মহিলা আমানতকারী কমেছে ১৪ হাজার ৮৫৪ জন।

তবে ব্যক্তি আমানতকারীর সংখ্যা কমলেও সার্বিকভাবে গত তিন মাসে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে এ খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, যা গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৪১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ২ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। তবে এর আগের চার প্রান্তিকে এ খাতে টানা আমানতের পরিমাণ কমতে দেখা গেছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে আট বিভাগের মধ্যে শুধু ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আমানত বেড়েছে। তবে অপর পাঁচটি তথা চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে আমানত কমে গেছে।

অন্যদিকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৭০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা, যা ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ৬৯ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসের ব্যবধানে এ খাতে ঋণ বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মে জর্জরিত এ খাতে খেলাপি ঋণও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। খেলাপি ঋণের হারও এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। তিন মাস আগে ওই বছরের জুনে ৬৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বিতরণ করা ঋণের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা আর্থিক খাতের বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা, সমস্যা ও নতুন নতুন যেসব চ্যালেঞ্জ আসছে তারই প্রতিফলন। ব্যাংকের ক্ষেত্রে যেমন খেলাপিরা টাকা ফেরত না দিলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একই আচরণ দেখা যাচ্ছে। এখানেও পরিচালক ও কর্মকর্তারা যোগসাজশে নামে-বেনামে ঋণের টাকা তছরুপ করে পালিয়ে গেছেন। ফলে এ খাতের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস ও সন্দেহ বেড়েছে, টাকা রাখলে ফেরত পাওয়া যাবে কি না, এই ভয় ঢুকে গেছে। এরই মধ্যে আমানতের সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ক্যাপ দেওয়ায় গ্রাহকরা আরও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা