আনিছুর রহমান
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩ ১৪:২৩ পিএম
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
২০২০ সালে ১৭ মে মাসে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।দায়িত্ব নিয়েই বন্ধ থাকা পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু করেন। সুশাসন ফেরাতে নেন বেশকিছু সিদ্ধান্ত। বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের পুঁজিবাজারের নানা বিষয় নিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিছুর রহমান।
বর্তমান পুঁজিবাজার কেমন যাচ্ছে আর আপনার নেওয়া পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন করতে পারলেন?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম : গত বছরের শুরুটা ভালোই যাচ্ছিল, কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রভাবে ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ হাজার ৮ পয়েন্টে ছিল, পরে নামতে শুরু করে। তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যা বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। তাই ওই সময়ে পুঁজিবাজারের মিসিং প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে বিএসইসি। ব্যাংকের মূলধনের ভিত্তি শক্ত করার জন্য বিভিন্ন সাব অর্ডিনেট বন্ড, পারপেচ্যুয়াল বন্ড দেওয়া হয়েছে। কমোডিটি এক্সেচঞ্জ নিয়ে কাজ চলছে, এটিবি মার্কেট চালু হয়েছে, রিড (রিয়েল এস্টেট ডেরিভেটিভস) নিয়ে কাজ চলছে।
২০২৩ সালে পুঁজিবাজার নিয়ে বিএসইসির পরিকল্পনা কী?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম : আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে বাজার মূলধন বাড়ানো, বিনিয়োগকারী বাড়ানো, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়ানো, বড় বড় বিনিয়োগকারীকে বাজারে আনার চেষ্টা করা। ভালো ভালো কিছু কোম্পানি যারা এখন পুঁজিবাজারে আসেনি, তাদেরকে এ বাজারে নিয়ে আসা।
নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম : এটার জন্য বড় বিনিয়োগ দরকার। এটা ‘গেমচেঞ্জার’। এর জন্য আরও দুই বছর আগে থেকে কাজ চলছে, এখন একটা পর্যায় চলে এসেছে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জের জন্য বিনিয়োগ দরকার, দক্ষ মানবসম্পদ দরকার। যদি এসব করা সম্ভব হয় তবে এ বছর চালু করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া এ বছর রিড (রিয়েল এস্টেট ডেরিভেটিভস) হয়ে যাবে, সেই সঙ্গে অরেঞ্জ বন্ড, পিংক বন্ড আসবে।
পুঁজিবাজারে বেশকিছু জায়গায় সুশাসনের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, কী ভাবছেন?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম : বর্তমান কমিশন প্রথম থেকেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে, সামনেও করবে। তবে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এক দিনেই অনেক চাপ দিলে সেটা কোম্পানি শ্রমিক-মালিক সবার ওপরই চাপ পড়বে। এমনিতেই ব্যবসায়ীরা করোনার পর মুনাফা করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আরও সুশাসন প্রতিষ্ঠা মানে আরও খরচ বাড়বে। তাই ধীরে ধীরে যাচ্ছি।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা লোপাট হয়েছে, এর বিপরীতে শাস্তির পরিমাণটা কি কম হচ্ছে?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম : কঠোর হওয়ার পরিকল্পনা আছে। কাস্টডিয়ান, ট্রাস্টিদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছি, জবাবদিহিতার মধ্যে রেখেছি। এখনও একটি তদন্ত চলছে। এরপর বড় ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ হচ্ছে সব মিলিয়ে তদারকি করা। যারা কাস্টডিয়ান ও এসবের দায়িত্বে থাকে তাদের কঠিন গভর্নেন্সের আওতায় নিয়ে আনব।
বাজারে লেনদেন কমে যাওয়ার কারণ কি আস্থার সংকট নাকি অন্য কিছু?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম : বাংলাদেশ বিনিয়োগের ‘রিটার্ন’ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বেশি। মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড, ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে ১০ শতাংশের বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। সুতরাং মুনাফার হার এখানে অনেক বেশি। এখানে বিনিয়োগকারীদের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে সাপ্লাই এবং বিদেশি মুদ্রার হার বৃদ্ধির কারণে তারল্য সংকট। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্পর্শকাতর পুঁজিাবাজারে।
‘ফ্লোর প্রাইস’ প্রত্যাহার নিয়ে কোনো চিন্তা করছেন?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম : এখনও ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার নিয়ে কোনো চিন্তা করছি না। পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলেছিলাম, কিন্তু ভালো ফল পাইনি। এ মুহূর্তে ফ্লোর প্রাইস ওঠানো নিয়ে কোনো চিন্তা করছি না। বাজার আরেকটু ভালো পর্যায়ে না গেলে ফ্লোর উঠছে না।
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে রোড শো করা হয়েছে, কিন্তু বিনিয়োগ বাড়ছে না কেন?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম : এ বছর যতটুকু কমেছে সেটা ডলার এক্সচেঞ্জ রেট বৃদ্ধির কারণে হয়েছে। কারণ বিদেশিরা মূলধন ও লাভ ফেরত নিয়ে যায়। মূলত বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে বিদেশিরা দ্রুত শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এটাই বিদেশি বিনিয়োগ কমার মূল কারণ। সামনে এক্সচেঞ্জ রেট কমে এলে ওরা আবার বিনিয়োগ করবে। কারণ এখানে রিটার্ন অনেক।
রোড শো বা সামিটে যেসব বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাদের বিনিয়োগ কতটা এলো?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম : বিএসইসি এটা ফলোআপ করে না। বাজারে আর্থিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যাদেরকে বিদেশিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা বলতে পারবে। কিছুদিন আগে একটা এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং ফান্ড-ইটিএফের অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। সেখানে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে। রোড শোর ফলাফল এক দিনে আসে না। এটার জন্য এক-দুই বছর সময় লাগে।
বর্তমান কমিশনের দায়িত্বকাল শেষে পুঁজিবাজারকে কোথায় দেখতে চান?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম : পুঁজিবাজারকে একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে চাই, সেখানে সব রকম পণ্য এবং সেবার সুযোগ দিতে চাই। সর্বোপরি আমরা চাই এখানে যারা বিনিয়োগ করবে, তারা সুরক্ষিত থাকবে এবং তারা ভালো রিটার্ন পাবে। এগুলো নিয়ে কাজ করছি।