প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩ ১৯:৪০ পিএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩ ১৯:৫১ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
কয়েকদিন ধরেই আলোচনার শীর্ষে থাকা ক্রেডিট সুইস ব্যাংক নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুইজারল্যান্ড। আর্থিক সংকটে থাকা ১৬৭ বছরের পুরোনো ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণে রাজি হয়েছে দেশটির আরেক শীর্ষ ব্যাংক ইউবিএস।
আলোচনায় ক্রেডিট সুইসের দাম ৮০০ কোটি ডলার চাওয়া হলেও সর্বশেষ তা ৩১৫ কোটি ডলারে হস্তান্তর হয়েছে। ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণের বিষয়ে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বলছে, ক্রেডিট সুইসের উদ্ধার চুক্তিটি আর্থিক বাজারের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতিতে ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম পদক্ষেপ।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্যাংক সিলিকন ভ্যালির পতনের পরপরই সিগনেচার ব্যাংকের পতন ব্যাংক খাতকে আরও অস্থির করে তুলেছে।
এর মধ্যেই ক্রেডিট সুইসের আর্থিক সংকটের খবর এ খাতের অস্থিরতাকে তুঙ্গে তুলেছিল। তবে সংকট কাটাতে তোড়জোড় শুরু করে সুইজারল্যান্ড। ক্রেডিট সুইসের অর্থনৈতিক সংকট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে বেশ তৎপরতা দেখা যায় সুইস সরকারের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুরু থেকেই সুইস সরকার ইউবিএসকে ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণে চাপ দিয়ে আসছিল। ফলে গঠনমূলক আলোচনায় বসে ক্রেডিট সুইস ও ইউবিএস।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকে সংকট শুরু হওয়ার পর বিপর্যয়ের মুখে পড়া প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রেডিট সুইস ব্যাংকটিকে রক্ষার জন্য ৩১৫ কোটি ডলারে কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউবিএস। গত রবিবার আলোচনার পর ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ তথ্য সামনে আসে।
এদিকে রবিবার রাতের ঘোষণার পর সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে বক্তৃতাকালে ইউবিএস চেয়ারম্যান কলম কেলেহার বলেন, ’এই অধিগ্রহণ ইউবিএস শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আকর্ষণীয় ছিল। তবে একে জরুরি উদ্ধার হিসেবেই আমরা বিবেচনা করেছি।’
ক্রেডিট সুইসে প্রায় ৭৪ হাজার কর্মী রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার রয়েছেন যুক্তরাজ্যে। কর্মীদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এ প্রশ্নের জবাবে ইউবিএস চেয়ারম্যান বলেন, ‘কর্মীদের বিষয়ে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমাদের যুক্তিসঙ্গতভাবে চিন্তাভাবনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আমরা বিশ্লেষণ করেছি যে আমাদের কী করা দরকার।’
সরকার বলেছে, সুইজারল্যান্ডে এবং এর বাইরে ছড়িয়ে পড়া অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রতিরোধের জন্য ব্যাংক কিনে নেওয়ার এই চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে। চুক্তির অংশ হিসেবে ইউবিএসকে ১০ হাজার কোটি ডলারের ‘লিকুইডিটি লাইন’ দিতে সম্মত হয়েছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। অর্থাৎ ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে নগদ প্রবাহের প্রয়োজনে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সাহায্য পাবে ইউবিএস।
তবে এই চুক্তি সম্পন্ন করতে নিজ দেশের আইন বদলাতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। সাধারণত, এ ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের ভোটাভুটি প্রয়োজন হয়। তবে এ চুক্তির ক্ষেত্রে যাতে শেয়ারহোল্ডারদের হস্তক্ষেপ বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেজন্য আইনে পরিবর্তন আনছে দেশটির সরকার।
ক্রেডিট সুইসের সমস্যা সমাধান হওয়ায় ব্যাংক খাত নিয়ে তৈরি হওয়া সংকট কেটে গিয়েছে বলে মনে করছে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তারা বলছে, নিয়ন্ত্রকরা ব্যাংকগুলোর ওপর ভয় ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ক্রেডিট সুইসের জন্য একটি উদ্ধার চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো নিরাপদ। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সঙ্গে ব্যাংক অব জাপান, ব্যাংক অব কানাডা, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক, ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ এবং সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বলছে, এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী ব্যাংক খাতের ওপর চাপ কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নগদ তারল্য রাখার জন্য, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ এই ছয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ঘোষণা করেছে, তারা বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মার্কিন ডলারের প্রবাহ বাড়িয়ে তুলবে।
সূত্র : বিবিসি