রাঙামাটি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৩:৫০ পিএম
রাঙামাটির প্রসেনজিৎ চাকমার বাগানে ভিয়েতনামি নারকেল। প্রবা ফটো
পাহাড়ে খাটো জাতের ভিয়েতনামি নারকেল চাষ শুরু হয়েছে। অল্প সময়ে ফলন পাওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন এ জাতের নারকেল চাষে। যথাযথ পরিচর্যা করলে নতুন জাতের এ নারকেল গাছ থেকে ২৮ মাসেই ফলন আসে। ফলনের পরিমাণ প্রচলিত জাতের থেকে প্রায় তিনগুণ।
নারকেল গাছের কথা বললেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল লম্বা আকৃতির একটি গাছ। এ গাছের একেবারে ওপরের দিকে থাকে ফল। কিন্তু ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারকেল গাছের ফল পাড়া যায় মাটিতে দাঁড়িয়েই। নারকেলগুলো মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে থাকে।
রাঙামাটি সদর উপজেলার দোখাইয়া পাড়া এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের এক দ্বীপে ভিয়েতনামি নারকেল চাষে সফলতা পেয়েছেন রাঙামাটির প্রসেনজিৎ চাকমা। জেলা কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে তিন একর জায়গায় তিনি এ নারকেল চাষ করেছেন।
২০১৭ সালে সরকারিভাবে ভিয়েতনাম থেকে আনা ৩০০ নারকেল চারা সংগ্রহ করে সেগুলো রোপণ করেন। ইতোমধ্যে তার নারকেল গাছে ৬০ -৭০ শতাংশ ফলন আসা শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে নারকেল বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্বে থাকা লক্ষ্মী বিকাশ চাকমা বলেন, আমি এই বাগানে দেখাশোনা করার দায়িত্বে কাজ করছি দেড় বছর ধরে। বাগানে প্রথম পর্যায়ে ফলন কিছুটু কম ছিল। আস্তে আস্তে তুলনামূলকভাবে বেশি ফলন হচ্ছে। পাইকারি দরে আকারভেদে একটি ডাব ৭০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। বাগানের ৭০ শতাংশ গাছে নারকেলের ফলন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে বাগানের সব গাছে ফল আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাগানের মালিক প্রসেনজিৎ চাকমা জানান, আমি এক বার ভিয়েতনামে গিয়ে সেখানে ভিয়েতনামি নারকেল খেয়েছি। অনেক স্বাদ। পরে যখন ২০১৭ সালে শুনলাম সরকারিভাবে ভিয়েতনামি নারকেলের চারা প্রতিটি ৫০০ টাকা করে দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। আমি শুনে খুশি হয়ে কৃষি বিভাগ থেকে ৩০০ চারা সংগ্রহ করে আমার অনাবাদি জমিতে লাগিয়েছি। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছু জায়গা এমনিতেই পড়ে থাকে। তাই আমি ভাবলাম যে আমি যদি ভালো কিছু করে দেখাতে পারি তাহলে মানুষ এটার আবাদ করতে পারে। ফলে অনেকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও জানান, আমরা কিছু চারা নার্সারি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি এবং ইতোমধ্যে কিছু নার্সারি চারার অর্ডারও পেয়েছি। আমি চাই আমার বাগানের দেখা দেখি অন্যরাও এই বাগান করুক এবং নিজেদের জীবনযাত্রা ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করুক।
রাঙামাটি সদর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা বলেন, বাগানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ গাছে ফলন আসা শুরু হয়েছে। এই ওপি জাতের নারকেলটি এখানে হওয়ার কারণে আমরা একেবারে নিশ্চিত হয়েছি যে আমরা এখানে বীজ এবং ফলন পাব।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, যারা এই ধরনের ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারকেল চাষ করতে আগ্রহী তাদের এই ধরনের গাছগুলো সম্পর্কে একটু সচেষ্ট থাকতে হবে। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে কৃষকরা যদি এই ধরনের খাটো জাতের ভিয়েতনামি নারকেল বাগান করেন তাহলে আমি মনে করি এখানে যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে এই বাগান থেকে বীজ সংগ্রহ করে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে এক দ্বীপে সারি সারি নারকেল গাছের বাগানটি রাঙামাটির সৌন্দর্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাগানটি রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন কাজ চলছে।