কুমিল্লা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩ ১২:১৭ পিএম
কুমিল্লার মুগুজি এলাকায় শসাক্ষেত পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। প্রবা ফটো
কুমিল্লা জেলা থেকে প্রতিদিন দুই টন বিষমুক্ত সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। তবে আরও বেশি পরিমাণে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কৃষি বিভাগের। সম্প্রতি জেলার বরুড়া উপজেলার মুগুজি গ্রামের মাঠে বিষমুক্ত নিরাপদ শসা চাষ পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এরকম দেশের ২০টি ইউনিয়নে এই নিরাপদ শসা চাষের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তার একটি বরুড়ার খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়ন। খোরপোশ থেকে আমরা বাণিজ্যিক কৃষিতে এসেছি। কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য তাদের কিছু শর্ত থাকে। আমরা তা পূরণের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকরা আসা শুরু করেছেন। এখন দিনে কুমিল্লা থেকে গড়ে দুই টন সবজি রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির মধ্যে এই ব্লকের নিরাপদ শসাও রয়েছে। ভবিষ্যতে রপ্তানি আরো বাড়ানো হবে।
জানা গেছে, মুগুজি এলাকায় যে শসা চাষ হচ্ছে, এবার তার বাজারমূল্য ছয় কোটি টাকা হতে পারে। গত বছর এই মাঠে সাড়ে চার কোটি টাকার শসা বিক্রি হয়। এবার কীটনাশকমুক্ত পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে চাষ করায় বেড়েছে শসার আকার। তাই বেশি দাম পাবেন কৃষকরা। এই শসা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হয় বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
সরেজমিন গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশের ৩৫ হেক্টর জমিতে শসার চাষ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় সেখানে সবুজ আর সবুজ। শসার মাচার ওপর দেওয়া হয়েছে হলুদ ও নীল পাতার পোকা মারার ফাঁদ। এর সঙ্গে রয়েছে কিউট্রেক ও সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ। পোকা দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে পাতা-লতার রস।
স্থানীয় কৃষক আমীর হোসেন বলেন, শসা চাষে ১০ গণ্ডায় (২০ শতক) এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদন হতে পারে প্রায় পাঁচ টন শসা, যার বাজারমূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা। বিষমুক্ত উপায়ে চাষ করায় ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে গেছে।
কৃষক মনির হোসেন, সাহাব উদ্দিন ও সফিকুল ইসলাম বলেন, ৬ গণ্ডায় খরচ হয়েছে ৭০ হাজার। বিক্রি হবে দেড় লাখ টাকা। সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে আমাদের আয়ও বাড়বে। বিষমুক্ত শসা উৎপাদনে কৃষি অফিস উদ্বুদ্ধ করেছে। আশা করছি ভালো ফলন হবে।
মুগুজি ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বরুড়ার খোশবাস ইউনিয়নের মুগুজি গ্রামে ২৫-৩০ বছর ধরে কৃষকরা শসা উৎপাদন করেন। এখানকার ৫০০ জন কৃষককে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি ও শসা উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিষমুক্ত শসার দাম তুলনামূলক বেশি। স্থানীয় ক্রেতারা এ দামের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেননি। প্রচারণা আরো বাড়ানো গেলে মানুষ এর গুরুত্ব বুঝবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এখানে নিরাপদ শসা উৎপাদনে উদ্যোগ নিয়েছি। এখানকার শসা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আশা করি এই প্রযুক্তি কুমিল্লাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, আগে মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে শাকসবজি রপ্তানিকারকদের হাতে পৌঁছাত। এবার ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। কুমিল্লার রপ্তানিযোগ্য শাকসবজি নিমসার বাজারে আনছেন স্থানীয় কৃষকরা। এখান থেকে তা সরাসরি রপ্তানিকারকদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে।