× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অর্থঋণ আদালত

খেলাপিবান্ধব উত্তরা ব্যাংক

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩ ২০:১২ পিএম

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩ ২৩:৪৯ পিএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

বেসরকারি খাতের উত্তরা ব্যাংককে খেলাপিবান্ধব বলে আখ্যায়িত করেছেন অর্থঋণ আদালত। রবিবার উত্তরা ব্যাংকের ৩৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার এক ঋণখেলাপিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার আবেদন করায় এই উক্তি করেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান।

আদালতের ভাষ্য মতে, ঋণখেলাপি এই গ্রাহককে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য গ্রাহকের সঙ্গে আবারও সমন্বয়ে যেতে চায় উত্তরা ব্যাংক। কিন্তু এরই মধ্যে আইন ভঙ্গ করে একাধিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে গ্রাহককে। সুবিধার মধ্যে সুদ মওকুফ, ঋণ পরিশোধের সময় বৃদ্ধি এবং মামলা পরিচালনার খরচ মওকুফ অন্যতম।

আদালতের আদেশে বলা হয়, সিগমা শিপ ব্রেকার্স লিমিটেডের এমডি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু উত্তরা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন ১৯৯৫ সালে। ঋণখেলাপি হন ১৯৯৭ সালে। সে সময় আদালত গ্রাহকের বিরুদ্ধে রায় দেন। কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেওয়ার কারণে ঝুলে যায় মামলা প্রক্রিয়া। সে সময় পাওনা টাকার পরিমাণ ছিল ২৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ব্যাংকের অবহেলায় ২০ বছরের অধিক সময়েও কোনো টাকা আদায় হয়নি। বর্তমান সময়ে এসেও ব্যাংকের দাবির পরিমাণ একই। এই মামলায় স্বচ্ছতা নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার অভাব ছিল বলে মনে করেন আদালত।

আদালতের তথ্য মতে, ২০০২ সালে ৩৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করার জন্য উত্তরা ব্যাংক অর্থজারি মামলা দায়ের করে। বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে টাকা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে দেওয়ানি আটকাদেশ প্রদানের আবেদন করে ব্যাংক। দেওয়ানি আটকাদেশ প্রদানের পর আসামি উত্তরা ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়। উত্তরা ব্যাংক বিআরপিডি সার্কুলার-১, তাং-০৬/০২/২০১৯ মোতাবেক ৮৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সুদ মওকুফ দিয়ে ২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আদায়যোগ্য দায় পুনর্নির্ধারণ করে ২০১২ সালে। ঋণের বিরপীতে ৪৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সম্পত্তি বন্ধক রয়েছে। এরই মধ্যে ঋণটি অবলোপন করে ব্যালেন্স শিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

অবলোপনকৃত এই ঋণ আদায়ের জন্য আইনগত প্রক্রিয়াকে দ্রুততর এবং ফলপ্রসূ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ রয়েছে। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত করে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও সুদ মওকুফ করে ৫ বছরে ২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে ব্যাংক, যা বিআরপিডি সার্কুলার-১, তাং-০৬/০২/২০১৯-এর নির্দেশনার পরিপন্থি। উক্ত সার্কুলারে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের জন্য আইনি প্রক্রিয়া জোরদার করার নির্দেশনা থাকলেও ডিক্রিদার ব্যাংক দায়িককে সুদ মওকুফ পূর্বক ৫ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিয়ে আইনি প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেওয়ার আয়োজন করেছে। অর্থঋণ আদালত আইনের ৪৯ ধারা মোতাবেক ডিক্রিদার ব্যাংক দায়িককে সর্বোচ্চ ৩ বছরে ডিক্রিকৃত টাকা পরিশোধে সম্মতি দিতে পারে। তাই উপরোক্ত মঞ্জুরিপত্র অর্থঋণ আদালত আইনের ৪৯ ধারার পরিপন্থি। ইতোপূর্বে দায়িক কর্তৃক দায়েরকৃত-৫০১৩/২০১৩ নং রিট মামলায় ডিক্রিদার জোরালো আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে ৫০১৩/২০১৩নং রিট মামলাটি নিষ্পত্তি হতে ৮ বছর সময় লেগেছে। নালিশী ঋণ হিসাবটি অবলোপনকৃত হিসাব হলেও অবলোপনের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত উত্তম চর্চা পরিপালন করা হয়েছে বলে মনে হয় না। কেননা ঋণের বিপরীতে মূল্যবান সম্পত্তি জামানত আছে। জামানত থেকে ঋণ আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া জোরদার না করে ডিক্রিদার ব্যাংক প্রকারান্তরে ঋণ খেলাপি দায়িককে সহযোগিতা করেছে। মূল ঋণ গ্রহীতা মৃত্যুবরণ করেননি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণবশত ঋণ আদায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়নি।

এ অবস্থায় নালিশী ঋণ অবলোপন করে এবং মূল ঋণ আদায় না হওয়া সত্ত্বেও ৮৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করে দিয়ে মূল ঋণ পরিশোধের জন্য ৫ বছর সময় মঞ্জুর করে ঋণ খেলাপিবান্ধব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ডিক্রিদার উত্তরা ব্যাংক লি.। দায়িকের মর্টগেজকৃত সম্পত্তির মূল্য ডিক্রিদার ব্যাংকের মূল্যায়ন অনুযায়ী ৮ গুণ বৃদ্ধি পেলেও ডিক্রিদার ব্যাংকের দাবি ৩৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা থেকে ২১ বছর পর ২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় নেমে আসা ন্যায়সংগত নয়। এক্ষেত্রে ডিক্রিদার ব্যাংক ট্রাস্টি অব পাবলিক মানি হিসেবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আইনগত খরচ আদায় সাপেক্ষে সোলেনামা করার বিধান থাকলেও ডিক্রিদার ব্যাংক দায়িকের কাছ থেকে কোনো আইনগত খরচ আদায় করেনি। দীর্ঘ ২৬ বছর মামলা পরিচালনার পর ডিক্রিদার ব্যাংক দায়িকের কাছ থেকে মাত্র ৪ লাখ টাকা আইনগত খরচ নির্ধারণ করেছে। এক্ষেত্রেও ডিক্রিদার ব্যাংক দায়িককে অনুচিত ছাড় দিয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

সার্বিক বিবেচনায় দাখিলকৃত সোলেনামা বিআরপিডি সার্কুলার নং-১, তাং-০৬/০২/২০১৯ এবং অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর ৪৯ ধারার পরিপন্থি হওয়ায় অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর ৩৮(৩) ধারা মোতাবেক নাকচ করা হলো। ১৮/১২/২০২২ খ্রি. তারিখের মঞ্জুরিপত্র বাতিলক্রমে দীর্ঘ ২৭ বছরের পুরোনো খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনগত পদক্ষেপ জোরদার করার জন্য ডিক্রিদার ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া গেল। পরবর্তী তারিখ-২৮/০৩/২০২৩ ডিক্রিদারের পদক্ষেপের জন্য আদেশের কপি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, উত্তরার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর বরাবরে প্রেরণ করা হোক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা