× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বাড়ছেই

জাহিদুল ইসলাম

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩ ১৭:০৪ পিএম

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৩ ১৭:২৪ পিএম

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বাড়ছেই

মিথ্যা তথ্যে বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানি-রপ্তানির কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে সরকার হারাচ্ছে বড় অঙ্কের রাজস্ব। সম্প্রতি গাজীপুরের পাঁচটি পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এগুলো হলো- গামি টেক্সটাইল, মাহমুদ ফেব্রিক্স অ্যান্ড ফিনিশিং লিমিটেড, মণ্ডল ফেব্রিক্স লিমিটেড, আলম নিট (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও ইমন ফ্যাশনস লিমিটেড। 

প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র তিন মাসে তাদের শিল্প-কারখানার নামে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন সোডিয়াম সালফেড এনহাইড্রোজ এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন সোডা অ্যাশ লাইট আমদানি করে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। এই শুল্কমুক্ত পণ্যগুলো তাদের নিজ নিজ কারখানায় ব্যবহার না করে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য খোলাবাজারে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করে আসছে। এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৬৮ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মূলত রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরকার শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক-করমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান এ সুবিধার অপব্যবহার করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্য রাতের আঁধারে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে এনবিআর, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় শিল্প।

রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বন্ড সুবিধায় বিনা শুল্কে আমদানি করা কাগজ, বোর্ড, সুতা, কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য বেআইনিভাবে খোলাবাজারে বিক্রির কারণে দেশি শিল্প খাত হুমকির মুখে পড়ছে। দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের তৈরি মানসম্মত পণ্যও বিনা শুল্কের কম দামি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারছে না। এতে দেশের রপ্তানিমুখী স্পিনিং ও উইভিং মিলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাধ্য হয়ে দেশের অনেক বস্ত্রকল এখন শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন, মজুরি ও অন্য ইউটিলিটি ব্যয় মেটাতে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে সুতা ও কাপড় বিক্রি করছে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান কার্যত বন্ধ থাকলেও তাদের বন্ড লাইসেন্স বিভিন্ন পন্থায় কার্যকর রেখে সুবিধা নিচ্ছে। বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চিহ্নিত এবং তাদের মধ্যে কতটি চালু আছে, তা নির্ধারণ করে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড লাইসেন্স বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে বস্ত্রকল মালিকদের পক্ষ থেকে।

ফলে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং বিপুলসংখ্যক শ্রমিক বেকারত্বের ঝুঁকিতে পড়ছেন। বর্তমানে এ সমস্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাগজ ও বস্ত্র শিল্প। কিন্তু বন্ড সুবিধায় অন্য শিল্প খাতের জন্য বিনা শুল্কে আমদানি করা সস্তা কাগজের দাপটে স্থানীয় বাজারে টিকতে পারছে না দেশের কাগজকলগুলো। অসাধু ব্যবসায়ীরা বিনা শুল্কে আমদানি করা সুতা ও কাপড় স্থানীয় খোলাবাজারে বিক্রির কারণে একই রকম সংকটে পড়েছে বেসরকারি বস্ত্রকলগুলোও।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, দেশীয় শিল্প যাতে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্যই এ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী বন্ডের সুবিধা নিয়ে এক পণ্যের নামে অন্য পণ্য আমদানি করছেন। এতে দেশি বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। যারা এভাবে বন্ডের অপব্যবহার করছে তাদের দমনে কঠোর হচ্ছে এনবিআর।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ মাসে গাজীপুরের পাঁচটি বন্ড লাইসেন্সধারী শিল্প-কারখানার মালিকরা শুল্ককরাদি ব্যতিরেকে তাদের শিল্প-কারখানার নামে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন সোডিয়াম সালফেড এনহাইড্রোজ এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন সোডা অ্যাশ লাইট আমদানি করেন।

উল্লেখ্য, বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা যখন বর্ণিত মালামাল বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করেন, তখন সরকার প্রতি মেট্রিক টন সোডিয়াম সালফেড এনহাইড্রোজের জন্য টিটিআই (মোট শুল্ক-করহার) ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ হিসাবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা ও সোডা অ্যাশ লাইটের জন্য টিটিআই ৩১ শতাংশ হিসাবে প্রতি মেট্রিক টনে প্রায় ১২ হাজার টাকা হারে শুল্ককর প্রযোজ্য ছিল। আর একটি বন্ড লাইসেন্সধারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি করা হলে তাদের কোনো শুল্ককর প্রদান করতে হয় না। 

এই শুল্কমুক্ত পণ্যগুলো তাদের নিজ নিজ কারখানায় ব্যবহার না করে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য খোলাবাজারে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করে আসছে। এতে দেখা যায়, শুধু তিন মাসে সোডিয়াম সালফেড এনহাইড্রোজ এবং সোডা অ্যাশ লাইট থেকে সরকার ১৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে অর্থাৎ ৮০ হাজার মেট্রিক টন সোডিয়াম সালফেড এনহাইড্রোজ থেকে ১০৮ কোটি টাকা ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন সোডা অ্যাশ লাইট থেকে ৬০ কোটি টাকা।

দেখা যায়, বন্ড লাইসেন্সের বিপরীতে যে প্রাপ্যতা প্রদান/অনুমোদন করা হয়, তা বাস্তবতা থেকে অনেক বেশি। যার ফলে বন্ড হোল্ডাররা খোলাবাজারে অবাধে পণ্য বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বন্ডের প্রাপ্যতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্ড লাইসেন্সের অধীনে আমদানি করা পণ্যগুলো শিল্প-কারখানায় সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা তদারকির নিমিত্তে পণ্য চালান শুল্কায়নকালে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারকে চিঠির মাধ্যমে অবহিতকরণ ও খালাসকৃত পণ্যের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে সরকারের রাজস্ব সুরক্ষা জরুরি। একই সঙ্গে বন্ডের অধীনে আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি রোধ করা গেলে উক্ত পণ্যগুলো প্রচুর পরিমাণে বাণিজ্যিকভাবে আমদানি হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আহরণের পথ সুগম হবে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা