ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৩৫ এএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:১১ পিএম
উপকূলীয় চরাঞ্চলে ৫৭০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ চাষ করা হয়েছে।
সোনাগাজীতে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে ফেনীর সোনাগাজীর উপকূলীয় চরাঞ্চলে ৫৭০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এতে কৃষকের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, গত মৌসুমে ২৬ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করা হয়েছিল। এবার ৫০ কোটি টাকার বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
গত বছরগুলোতে তরমুজে ব্যাপক লাভ হওয়ায় এবার আবাদ আরও বেড়েছে। কৃষকরা জানান, এ বছর সেচের ব্যবস্থা থাকায় অনাবাদি জমিতেও তরমুজ চাষে নেমেছেন অনেকে। তারা এখন মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বরের শেষ সময় থেকে তরমুজ চাষের মৌসুম শুরু হয়। তবে, ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় জমির ইজারামূল্যও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর, চরচান্দিয়া, চরদরবেশ, সোনাগাজী সদর ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এখন তরমুজ আবাদের মহাযজ্ঞ চলছে। চাষিদের ব্যস্ততায় ক্ষেত ঘিরে দেখা যাচ্ছে প্রাণচাঞ্চল্য। অনেক মাঠেই বীজ রোপণ হয়ে গেছে। বেশির ভাগ জায়গায় জমি প্রস্তুতের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। কিছু জায়গায় চারা বাড়তে শুরু করেছে সেখানে সার, পানি ছিটানো আর বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলাতে ৫৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গেল বছর চাষ হয়েছে ৩৪৫ হেক্টর জমিতে এবং ২০২১ সালে চাষ হয়েছে ১১৭ হেক্টর জমিতে। ক্রমান্বয়ে চাষাবাদের পরিমাণ বাড়ছে।
সোনাগাজী দক্ষিণ চরদরবেশের কৃষক মাইন উদ্দিন জানান, তিনি গত বছর ৯ একর জমির তরমুজ বিক্রি করে ১১ লাখ টাকা পেয়েছেন। এ বছর আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে ১৫ একর জমিতে ঠেকেছে।
তিনি বলেন, দাম থাকলে তরমুজে ব্যাপক লাভ। এবার মানুষ তরমুজের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। কোথাও কোনো জমি ফাঁকা থাকছে না। লাখপতির আশায় সবাই নেমেছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, আমন ধানের বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তুলতে ছয় মাস সময় লাগে। প্রতি বিঘা আমন উৎপাদনে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমির ধান বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায়। সে ক্ষেত্রে প্রতি বিঘায় আমন আবাদে লাভ হয় সর্বোচ্চ ৮-৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে তরমুজে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত সময় লাগে সর্বোচ্চ আড়াই মাস। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ১৪-১৫ হাজার টাকা। এতে তরমুজ বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায়। যদিও এবার খরচ কিছুটা বাড়বে।
এদিকে সোনাগাজী অঞ্চলের তরমুজ যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। সোনাগাজীর তরমুজ চাষি মো. সেলিম ও জহির উদ্দিন জানান, এখান থেকে তরমুজ সরাসরি ফেনী শহর, চট্টগ্রামের ফলমন্ডি, ফিরিঙ্গি বাজার, চকরিয়া, পটিয়া, সাতকানিয়া যায়। সেখানকার আড়তদারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।
তারা বলেন, আমরা নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বাসিন্দা, এই এলাকায় দীর্ঘ তিন-চার বছর তরমুজ আবাদ করে আসছি।
আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. শামীম জানান, এই মৌসুমে আমরা ১৪ জন মিলে ১৫০ একর জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেছি। জমির মালিকদের কাছ থেকে তিন মাসের জন্য শতকপ্রতি ১০০ টাকা করে লিজ নিই। পুরো জমিই এক ক্ষেত। ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা খরচে আমরা এই চাষাবাদ শুরু করেছি।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র নাথ জানান, এক বিঘা জমি পরিমাণ প্রদর্শনী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনো সুবিধা আমাদের না থাকায় দেওয়া সম্ভব হয়নি।