প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৫২ পিএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:০৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন ডলার ক্রমশ শক্তিশালী হওয়ায় ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে বিভিন্ন দেশ। এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে। একই সঙ্গে রাশিয়ার উৎপাদন ও সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা বাজারজুড়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে দাম ক্রমশ নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ বা ৩০ সেন্ট কমে ৮২ ডলার ৮৬ সেন্টে লেনদেন হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলপ্রতি ২৩ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমে ৭৬ ডলার ৯ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। গত শুক্রবার উভয় বেঞ্চমার্কে ৯০ সেন্টের বেশি দাম কমেছে। এদিকে গত সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে ডলারের দাম।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবিষ্যতে দীর্ঘ সময়ের জন্য আরও বেশি সুদের হার বাড়ানোর কথা বলছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে অন্যান্য মুদ্রা ব্যবহারকারীদের জন্য ডলার ব্যবহার করে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
তেলের বাজার বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ভান্দা ইনসাইটসের প্রতিষ্ঠাতা বন্দনা হরি বলেন, ‘বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা কম-বেশি হচ্ছে।’
গত ডিসেম্বরে ব্যক্তিগত ভোগব্যয় (পিসিই) মূল্য সূচক শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছিল। তবে এক মাসের ব্যবধানেই গত মাসে পিসিই মূল্য সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। এভাবেই যদি বিভিন্ন ঝুঁকি বাড়তে থাকে, তাহলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার নতুন চাপের মধ্যে পড়বে বলেও মনে করেন বন্দনা হরি।
রাশিয়া প্রতি মাসে ৫ শতাংশ হারে জ্বালানি তেল উৎপাদন কমানোর কথা বলেছিল। তবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে রাশিয়া তার পশ্চিম বন্দরগুলো থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি কমানোর পরিকল্পনা করেছে। এমনকি ইউক্রেনকে সহায়তা করতে পোল্যান্ডের প্রথম যুদ্ধযান ইউক্রেনে সরবরাহের এক দিন পর গত শনিবার রাশিয়া দ্রুজবা পাইপলাইনের মাধ্যমে পোল্যান্ডে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
যদিও জ্বালানি তেলের সংকট কাটাতে ২০২১ সালের মে মাসের পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ)। কিন্তু কনসালটেন্সি এনার্জি অ্যাসপেক্টসের বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘ইআইএর প্রদান করা তথ্য বাজার নিয়ে স্পষ্ট ধারণার পরিবর্তে আরও অনেক প্রশ্ন সামনে এনেছে।’
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর দুই সপ্তাহ পরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহে উদ্বেগের কারণে ব্যারেলপ্রতি দাম প্রায় ১২৮ ডলার পৌঁছেছিল। তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের দাম এক-ষষ্ঠাংশ কমেছে।
চলতি সপ্তাহে জ্বালানি তেলের চাহিদাসংক্রান্ত স্পষ্ট দিকনির্দেশনার জন্য চীনের জরিপের দিকে তাকিয়ে আছে বিনিয়োগকারীরা। চীন এই সপ্তাহের শেষে তার বার্ষিক সংসদীয় সভা করবে। যেখানে নতুন অর্থনৈতিক নীতি ও লক্ষ্য দেখা যাবে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ইউবিএসের চীনা জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নিং ঝাং বলেন, ‘আমরা আশা করি, সরকার প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবে এবং আরও নীতিগত সহায়তার আহ্বান জানাবে।’
চলতি বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের যে চাহিদা থাকবে তার অর্ধেক চীন থেকে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ইনার্জি এজেন্সির (আইইএ) নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল।
তিনি বলেন, ‘চীনের জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধি তেলের দামের মূল চালিকাশক্তি। দেশটিতে এখন জেট ফুয়েলের চাহিদা বেড়েছে। আইইএ আশা করছে, এ বছর বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের যে চাহিদা থাকবে তার অর্ধেক আসবে চীন থেকে।’ সূত্র : রয়টার্স