প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৩০ পিএম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৪ পিএম
প্রবা ফটো
প্রতিনিয়ত বাজারে সরবরাহ সংকট দেখিয়ে সুযোগ নেয় খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাজার নিয়ন্ত্রণে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে নিয়মিত তদারকির বিকল্প নেই। পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে মূল্যের পার্থক্য থাকে, তা কমিয়ে এনে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হবে বলে জানান কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।
রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আয়োজিত রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবারহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানান তিনি। এ সময়ে তিনি বলেন, ’মুদ্রানীতির ওপরেই নির্ভর করে মূল্যস্ফীতি। এক্ষেত্রে মুদ্রানীতি যদি ভালো হয় তবে মূল্যস্ফীতি ভালো থাকে।’ তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভালোভাবে মুদ্রানীতি প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
গোলাম রহমান আরও বলেন, 'রমজানে নিত্যপণ্যের একটা সংকট তিরি হয় ভোক্তাদের সচেতনতার অভাবেও। কেননা রমজানের শুরুতে ভোক্তারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে পণ্য কিনে রাখে। এতে প্রথম দিকে বাজারে বেশ একটা ঘাটতি তৈরি হয়। দেখা যায় ১৫ রমজানের পর থেকে বাজার আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যায়। তাই প্রয়োজন যতটুকু ততটুকুই কিনে সংগ্রহ করতে হবে। সচেতন হতে হবে ভোক্তাদেরকেই।’
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, 'মূল্যস্ফীতির কারণে কষ্টে আছে মানুষ। বিশেষ করে দেড় থেকে ২ কোটি নিম্ম বেতনভুক্তরা কষ্টে রয়েছে বেশ। সামনের রমজানকে ঘিরে ডলারের মূল্য না বাড়লে নিত্যপণ্যের সরবরাহ সব সময়েই স্বাভাবিক থাকবে। এক্ষেত্রে ডলারের বাজার স্বাভাবিক রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমাদের ব্যবসায়ীরা মূল্য তালিকা টানিয়েই ব্যবসা করবে।’
আলোচনায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, 'আমদানি প্রক্রিয়া গুটি কয়েকজনের হাত থেকে বের করে এনে সেন্ট্রাল বোন্ড তৈরি করতে হবে। এই সেন্ট্রাল বোন্ড মৌসুমী পণ্য আমদানি করে মজুদ করবে। আর এই সেন্ট্রাল বোন্ডের আওতায় আমদানি কার্যক্রম যেকোনো ব্যবসায়ী বা সরকার করতে পারবে।'
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, 'ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংক সমস্যা করলে জানাবেন। এক্ষেত্রে আমরা ব্যাংকে গিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। সব মিলিয়ে এবারের রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা ব্যবসায়ীদের দৃঢ়ভাবে থাকতে হবে। গুটি কয়েক অসাধুদের কারণে সকল ব্যবসায়ী খারাপ হোক এটা আমরা চাই না।'
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, 'বাজারে প্রতিযোগিতার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।প্রতিযোগিতার ঘাটতি হলে ব্যবস্থা নিতে হবে প্রতিযোগিতা কমিশনকে। দাম নির্ধারণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। তারপরও আমরা চিনি এবং ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছি। আর চিনি এবং ভোজ্য তেল ছাড়া অন্যান্য পণ্য আমদানিতে শুল্ক নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে ব্যবসায়ীরাই। সুতরাং ব্যবসায়ীরা তাদের জায়গা থেকে সর্ব্বোচ্চটা দিতে পারলেই রমজান ছাড়াও অন্যান্য সময়েও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বাজার।'
মতবিনিয়ময় সভায় উৎপাদক, পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগের তীর ছুড়েছেন একে অপরের ওপর। উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত ছিল প্রতিদিন যে পরিমাণ উৎপাদন ও পণ্য বিক্রি করা হয়, তার নিয়মিত তথ্য দেওয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এক্ষেত্রে কোনো দায় নেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার নির্ধারিত দাম কিংবা এর চেয়ে কম দামেও পণ্য বিক্রি করে থাকেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সুতরাং পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিজস্ব অবস্থান থেকে স্বচ্ছ রয়েছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের মতামত ছিল দোকানে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি ন্যায্যমূল্য পেলে তবেই বিক্রি করবেন তারা। অতিরিক্ত দামে পণ্য কিনে বিক্রি করবেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে নিয়মিত মূল্য তালিকা টানিয়েই বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তারা।