সাক্ষাৎকার
মোহন আখন্দ
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:১৮ পিএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:৩২ এএম
বগুড়া জেলার সর্বোচ্চ করদাতা মাসুদুর রহমান মিলন। প্রবা ফটো
২০১১ সাল থেকে বগুড়া জেলার সর্বোচ্চ করদাতার স্বীকৃতি পেয়ে আসছেন মাসুদুর রহমান মিলন। ঠিকাদারি, আবাসন এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তার বিনিয়োগ রয়েছে। বগুড়ার ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে নানা সংকট এবং সম্ভাবনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহন আখন্দ।
বগুড়ায় আবার নতুন করে কলকারখানা গড়ে উঠছে।শিল্পয়ানে এই অগ্রগতি কীভাবে সম্ভব হলো?
মাসুদুর রহমান মিলন : বগুড়ার মানুষ বরাবরই উদ্যমী। এই উদ্যম থেকেই গত শতাব্দীর ষাটের দশকে বগুড়ায় অনেক বড় বড় শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠেছিল। মাঝে আশির দশকে নানা কারণে বেশ কয়েকটি বড় শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তবে উদ্যোক্তারা দমে যাননি। তারা ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্পের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাতে থাকেন। ওই সময় জমিতে সেচের জন্য চীন থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত অগভীর নলকূপ আমদানিও বেড়ে যায়। তখন স্থানীয় ফাউন্ড্রি শিল্প (লোহা ছাঁচে গলিয়ে চাহিদামতো পণ্য উৎপাদন করা হয়) মালিকরা মাছ ধরা জালের কাঠি, পণ্য ওজনের বাটখারা এবং লোহার কড়াইয়ের উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে পানি উত্তোলক সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প তৈরিতে মনোযোগী হন। এরপর ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর কারণে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলে তাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তারা বড় আকারের কিছু করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
বর্তমানে বগুড়া থেকে কী কী পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে?
মাসুদুর রহমান মিলন : বর্তমানে বগুড়া থেকে পাটজাত পণ্য, অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান অয়েল, পানির পাম্প, তৈরি পোশাক এবং গাছের চারাসহ ১৬ ধরনের পণ্য ভারত, যুক্তরাজ্য, তুরস্কে রপ্তানি হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২২ সালে শুধু বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের মাধ্যমেই ৬০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়। তবে এর বাইরে এখানকার উদ্যোক্তারা দেশের অন্যান্য চেম্বারের মাধ্যমে আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছেন বলে আমরা খবর পেয়েছি। সেই হিসেবে বলা যায়, বগুড়া থেকে গত বছর ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বেশি জমিতে আলুর আবাদ হয় বগুড়ায়।ব্যক্তি উদ্যোগে আলু রপ্তানির কথা শোনা যায়। এটি বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
মাসুদুর রহমান মিলন : আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি রপ্তানির সুযোগ রয়েছে ঠিকই কিন্তু অভ্যন্তরীণ চাহিদার দিকেও তো খেয়াল রাখতে হবে। কারণ কৃষকরা সাধারণত ধানের আবাদ ঠিক রাখলেও অন্য ফসলের আবাদ পরের বছর বাড়িয়ে বা কমিয়ে থাকেন। যখন যে ফসলের দাম ভালো যায়, তখন তারা লাভের আশায় সেই ফসলের আবাদ বাড়িয়ে দেন। এই যেমন গত দুই বছর তারা আলু কমিয়ে সরিষার আবাদ বাড়িয়েছেন। ফলে এখন যদি আমরা আলু রপ্তানি বাড়িয়ে দিই, তাহলে ঘাটতি দেখা দেবে। তখন আবার উল্টো আমদানি করতে হবে। অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। সে কারণে আমরা ইচ্ছা করলেও কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে পারি না।
বগুড়ায় রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়?
মাসুদুর রহমান মিলন : রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু বগুড়ার উদ্যোক্তারা ব্যাংকগুলো থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা পান না। বিশেষত বগুড়ার বাইরের জেলাগুলোর উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এলসির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে অনেক সাপোর্ট পান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মোট মূল্যের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে পেয়ে থাকেন, যা দিয়ে তারা চাহিদামতো পণ্য উৎপাদন করেন এবং পরে রপ্তানির পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সেই অর্থ সমন্বয় করে নেয়। কিন্তু বগুড়ার উদ্যোক্তাদের সিংহভাগই নিজের অর্থ দিয়ে পণ্য উৎপাদন করতে হয়। যদি ব্যাংকগুলো এলসির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করত, তাহলে বগুড়া থেকে রপ্তানি আরও বাড়ত।
বগুড়ায় পাইপলাইনে গ্যাস এসেছে দেড় যুগ আগে। তারপরও প্রত্যাশা অনুযায়ী শিল্পায়ন না হওয়া কারণ কী?
মাসুদুর রহমান মিলন : এর মূল কারণ হলো গ্যাসের সংযোগ শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু কলকারখানাগুলো গড়ে উঠছে শহরের বাইরে সড়ক-মহাসড়কের ধারে এমনকি উপজেলা পর্যায়ে ফসলি জমিতে, যেখানে গ্যাস সংযোগ নেই। এটাও ঠিক যে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কলকারখানায় এভাবে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পপার্ক স্থাপন করা হলেই কেবল সেখানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। এজন্য আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের দাবি জানিয়েছি। তা ছাড়া চাহিদা রয়েছে বলে বিসিকের পক্ষ থেকেও শিল্পপার্ক স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।