× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তেল চুরিতে সক্রিয় দুটি সিন্ডিকেট

চট্টগ্রাম প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙর ও কর্ণফুলী নদীতে থাকা জাহাজ থেকে তেল চুরি থামছেই না। রাতের আঁধারে চোরাই তেল পাচারে সক্রিয় একাধিক চক্র। এদের মধ্যে কর্ণফুলী থানা এলাকায় আব্দুস শুক্কুর ও ইপিজেড থানা এলাকায় হারুনুর রশিদের চক্র উল্লেখযোগ্য। অভিযোগ এ দুটি চক্র স্থানীয় থানা পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের ‘ম্যানেজ’ করে বহিনোঙরে থাকা বিদেশি জাহাজ থেকে তেল চুরি করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মধ্যে অভিযান চালায়, জব্দ করে চোরাই তেল। এতে দু একদিন চুরি বন্ধ বা কমলেও আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। চলতে থাকে তেল চুরি।

চোর চক্র সক্রিয় থাকার বিষয়ে সদরঘাট নৌ থানা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ একরামুল্লাহ বলেন, ‘তেল চুরির ঘটনায় ফেব্রুয়ারি মাসে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া আরও দুটি ঘটনায় নৌপুলিশ সদস্যদের দেখে চোর চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ নৌকায় থাকা ৫০০ লিটার তেল জব্দ করে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তেল চুরির ঘটনায় আটকরা জানিয়েছেন-তারা কর্ণফুলী নদী অথবা বহির্নোঙরে তেল নিয়ে আসা জাহাজ থেকে নাবিকদের সহযোগিতায় তেল সংগ্রহ করেন। আবার নিজস্ব ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া তেলও অনেক সময় লাইটার জাহাজ নাবিকরা কম দামে বিক্রি করে। আমদানি করা ভোজ্যতেলও একইভাবে জাহাজের নাবিকদের সহযোগিতায় সংগ্রহ করেন।’

থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জাহাজ থেকে তেল চুরির ঘটনায় সদরঘাট নৌ থানায় ২০২২ সালে ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রায় ১৫ হাজার ১৪০ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১১ হাজার ৬০০ লিটার ভোজ্যতেল ও তিন হাজার ৫৪০ লিটার ডিজেল ছিল। এর বাইরে চলতি বছরের দুই মাসে তিনটি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী নদীর চরপাথরঘাটা এলাকার তোতার বাপের ঘাটের কিনারা থেকে চোরাই তেলসহ দুইজনকে আটক করে সদরঘাট নৌ থানা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ২৮০ লিটার ডিজেল উদ্ধার করা হয়। 

সদরঘাট নৌ থানা পুলিশ ছাড়াও জাহাজ থেকে তেল চুরির ঘটনায় নগরীর কর্ণফুলী, পতেঙ্গা এবং ইপিজেড থানায়ও বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। তেল চুরির ঘটনায় ২০২২ সালে কর্ণফুলী থানায় ৩টি মামলা করা হয়। এসব ঘটনায় একহাজার ৩৪০ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৬০০ ছিল ভোজ্যতেল। 

জানতে চাইলে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) কো-কনভেনার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আগে বড় আকারে চুরি হতো। এখন ছোট আকারের চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে। মাদার ভেসেলে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করতে যেসব ইঞ্জিন নৌকা যায়, সেগুলোর মাধ্যমে ড্রাম ভর্তি করে তেল পাচার হয়।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর পতেঙ্গা, ইপিজেড, কর্ণফুলী, সদরঘাট ও বন্দর এলাকাকে ঘিরে তেল চোর সিন্ডিকেটের তৎপরতা চলে। বিদেশে থেকে তেলসহ খাদ্যপণ্য নিয়ে আসা জাহাজ থেকে তেল সংগ্রহ করে এসব এলাকায় মজুদ করা হয়। এর সাথে যুক্ত রয়েরেছন কিছু অসাধু নাবিক। জাহাজে থাকা নাবিক এবং অন্য স্টাফাদের জন্য খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জাহাজে পৌঁছে দেওয়ার নামে বহিনোঙরে ভাসমান জাহাজ থেকে ড্রামে ভরে তেল নামানো হয়। পরে ওই তেল ভাউচার করে খোলা বাজারে বিক্রি করে। 

অনেক সময় জাহাজ থেকে তেল সংগ্রহ করে চক্রের নিজস্ব গোপন ডিপোতে মাটির নিচে ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে। পরে সুবিধাজনক সময়ে স্থানীয় পেট্রোল পাম্প, ইঞ্জিনচালিত বোট এবং লাইটার জাহাজে বাংকারিং করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রীয় তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল লিমিটেডের তেল জাহাজে করে সারাদেশে পরিবহনের সময় চুরি করে। তেল লোড করে প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ডিপোতে যাওয়ার সময় ছোট ছোট মোটর লাগিয়ে ড্রাম ভর্তি করা হয়। পরে সমুদ্রের উপকূলে এনে খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়। 

আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, জাহাজ থেকে তেল চুরির সঙ্গে একাধিক সিন্ডিকেট জড়িত থাকলেও দুটি সিন্ডিকেট খুব সক্রিয়। এ দুটি সিন্ডিকেটই দীর্ঘদিন ধরে তেল চুরির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর একটি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন কর্ণফুলী থানার জুলধা ইউনিয়নের আব্দুস শুক্কুর। তিনি কর্ণফুলী নদীর তীরে পিবিএম নামক ইটভাটা দিয়ে রাতের অন্ধকারে চোরাই তেল নদী থেকে তীরে উত্তোলন করেন। তেল ব্যবসা পরিচালনার জন্য কর্ণফুলী নদীর দুটি ঘাটের ইজারাও নিয়েছেন তিনি। ২০০০ সাল থেকে তেল চুরির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে তেল চোর চক্রের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেন বলে অভিযোগ। পতেঙ্গা গুপ্তাখাল ডিপো এলাকাসহ বঙ্গোপসাগরের চোরাই তেলের বড় একটি অংশই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। অন্য সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন নগরীর ইপিজেড এলাকার হারুনুর রশিদ।

অভিযোগ রয়েছে, এ দুটি চক্র স্থানীয় থানা পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের ‘ম্যানেজ’ করে বহিনোঙরে থাকা বিদেশি জাহাজ থেকে তেল পাচার করেছে। জাহাজগুলো তেল নিয়ে আসার পর নাবিকদের যোগসাজশে কিছু তেল নামিয়ে ফেলে। তেল চুরির ঘটনায় দুই সিন্ডিকেটের একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। 

আইনশৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, শুক্কুরের বিরুদ্ধে তেল চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১০টির অধিক মামলা রয়েছে। ২০০০ সাল থেকে তেল চুরির অভিযোগ থাকলেও তিনি তেল বিক্রির জন্য ২০১৪ সালে মেঘনা পেট্রোলিয়াম করপোরেশন থেকে তেল বিক্রির লাইসেন্স নেন। তার দৈনিক ৪০ ড্রাম তেল বিক্রির সুযোগ থাকলেও শতাধিক ড্রাম পাচার করছেন। কখনো হাজার ব্যারেল তেল পাচার করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে হারুনুর রশিদের নেতৃত্বাধীন চক্রটি বালুবাহী বার্জ দিয়ে তেল পাচার করেন। এমভি তানিশা নামে তার একটি জাহাজ আছে। অভিযোগ রয়েছে ওই জাহাজে করেই তেল পাচার করের তিনি। চোরাকারবারসহ বিভিন্ন অভিযোগে হারুনুর রশিদের নামে নগরীর পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানায় অন্তত চারটি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি এমভি তানিশা জাহাজ থেকে ১১ হাজার লিটার চোরাই ভোজ্যতেল উদ্ধার করে নৌ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় হারুনুর রশিদসহ তার ভাইয়ের নামে একটি মামলা করা হয়।

জানতে চাইলে আব্দুস শুক্কুর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘তেল পাচারের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পারিবারিক জায়গা জমির বিরোধ নিয়ে একাধিক মামলা আছে। তবে জাহাজের তেল পাচারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। মেঘনা অয়েল থেকে আমি লাইসেন্স নিয়েছি। ওই লাইসেন্সের বিপরীতে আমি তেলের ব্যবসা করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে হারুনুর রশিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা