আনিছুর রহমান
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৪৯ পিএম
প্রবা ফটো
মো. ছায়েদুর রহমান বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট। এর আগেও দুই দফায় তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। পুঁজিবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা, আইপিও আনা, পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা করাসহ নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিছুর রহমান
বর্তমান পুঁজিবাজার পরিস্থিতিতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর অবস্থা কেমন দেখছেন?
ছায়েদুর রহমান : পুঁজিবাজার যেহেতু ধীরগতিতে চলছে, সুতরাং মার্চেন্ট ব্যাংকের গতি বাড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ পুঁজিবাজার বৃদ্ধির সঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তবে শুধু ইস্যু ব্যবস্থাপনা নয়, মার্চেন্ট ব্যাংকের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত পোর্টফোলিও বা সম্পদ ব্যবস্থাপনা করা এবং অ্যাডভাইজরি সার্ভিস দেওয়া। কেননা এসব সেবা দেওয়ার লাইসেন্স শুধু মার্চেন্ট ব্যাংকারদেরই আছে। তাই পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে মার্চেন্ট ব্যাংক।
ইতোমধ্যে বিএমবিএর অনেক প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবায়ন করেছে, এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
ছায়েদুর রহমান : বিএমবিএ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর কোনোটাই মার্চেন্ট ব্যাংকের স্বার্থে দেওয়া হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তার সবই পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য দেওয়া হয়েছে। এই যেমন এক্সপোজার গণনা, প্রভিশন কমানো। আর কোনো বিষয়ের ফল এক-দুই মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে না। এগুলোর সুফল পাওয়া যাবে দীর্ঘমেয়াদে। আশা করছি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
মার্চেন্ট ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দেওয়া হয়, সেগুলো বাস্তবায়ন করার অবস্থা পুঁজিবাজারে আছে?
ছায়েদুর রহমান : বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে আইপিও না নিয়ে আসার দাবি উঠেছে। সেখানে মার্চেন্ট ব্যাংকাররা কোথায় আইপিও নিয়ে কাজ করবে? এ ছাড়া যারা আইপিওতে আসার কথা তারা পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। এত বেশি নিয়মের মধ্যে পড়তে চায় না। তাহলে মার্চেন্ট ব্যাংক কীভাবে বছরে দুটি আইপিও নিয়ে বাজারে আসবে।
পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্টে কতটা এগিয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংক?
ছায়েদুর রহমান : এটার সুনির্দিষ্ট তথ্য বিএমবিএর কাছে নেই। ফলে পোর্টফলিও ব্যবস্থাপনা কতটুকু এগিয়েছে তা বলতে পারব না। পোর্টফোলিও ম্যানেজারের মাধ্যমে শেয়ার ব্যবসা করায় খুব কম বিনিয়োগকারী আগ্রহী দেখায়। এক্ষেত্রে তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনায় থাকা ফান্ডগুলো তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকে। এখানে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম।
সিসটেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (সিআইপি) নিয়ে কাজ করছে মার্চেন্ট ব্যাংক। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
ছায়েদুর রহমান : এটা খবই প্রশংসার দাবি রাখে। এটা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে, যা বাজারে ভারসাম্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের মাধ্যম হতে পারে এই সিআইপি।
দেশের পুঁজিবাজারে সিআইপি কি অনেক দেরি করে নিয়ে আসা হয়েছে?
ছায়েদুর রহমান : নতুন পণ্য নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বলতা আছে। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যাবে এমন নতুন পণ্য নিয়ে আসা উচিত। তবে আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা নিজেরা স্ক্রিনের সামনে গিয়ে লেনদেন করতে বেশি পছন্দ করে। সে কারণে পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা করার বিষয়টি জনপ্রিয় করা যায়নি।
বাজারের তুলনায় মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা কি বেশি?
ছায়েদুর রহমান : মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা বেশি না। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আইপিও বিষয়টা সেকেন্ডারি হিসেবে ধরে পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এটা করলে পুঁজিবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংকের অংশগ্রহণ বাড়বে। যা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় বাড়ানোর পাশাপাশি পুঁজিবাজারকেও গতিশীল করবে। তবে সাইনবোর্ড ভিত্তিক হয়ে লাভ নেই, সক্রিয় হতে হবে। পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করতে হবে। নতুন পণ্য নিয়ে আসতে হবে। তবে মার্চেন্ট ব্যাংক বাড়লে পুঁজিবাজার উপকৃত হবে।
আসছে বাজেট নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব আছে?
ছায়েদুর রহমান : পুরোনো প্রস্তাব আবারও দিতে চাই। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহারের পার্থক্য ১৫ শতাংশ করতে হবে। সাড়ে ৩৭ শতাংশ হারে কর দিতে হচ্ছে, যা প্রত্যাহার করা উচিত। কোম্পানি যে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের বিতরণ করে তার ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করা উচিত, এতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী বাড়বে, বাজারের গভীরতা বাড়বে।
লেনদেন বৃদ্ধি ও বাজারের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কোথায়?
ছায়েদুর রহমান : বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী নেই, সবাই খুব স্বল্প সময়ের জন্য আসে। কিছুদিন লেনদেন করে, একটু মুনাফা পেলে বিক্রি করে দিয়ে চলে যায়। ফলে সূচক বৃদ্ধির সঙ্গে লেনদেন বৃদ্ধি পায়। আবার এই বিনিয়োগকারীরা চলে গেলে বাজারে ধীরগতি চলে আসে। কিন্তু লভ্যাংশ বিভিন্ন স্তরে দিতে হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো স্বল্প সময়ের জন্য বিনিয়োগ করে?
ছায়েদুর রহমান : ব্যক্তি যে উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানও একই উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করে। সুতরাং বাজারের আচরণ যদি স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ হয়, তবে কারও কাছ থেকেই দীর্ঘমেয়াদ বিনিয়োগ আশা করা যায় না। কারণ দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ কাঠামো না দাঁড়ালে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী তৈরি করা যাবে না।