জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় ১৯৫ কোটি ডলার

ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়তে শুরু করেছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়প্রবাহ। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ২০ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে)। অর্থাৎ প্রতিদিন এসেছে গড়ে ৬ কোটি ৩১ লাখ ডলারের বেশি। এর আগের মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ১৬৯ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য রেমিট্যান্সে প্রণোদনাও বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব উদ্যোগ কাজে আসছে। এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, ’আমাদের সামনে দুটি ধর্মীয় উৎসব (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) আছে। এ দুই ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে। কারণ প্রবাসীরা নিজ পরিবারের কেনাকাটায় এ সময়ে বেশি অর্থ পাঠিয়ে থাকেন। এতে আমাদের দেশের ডলার সংকটও কিছুটা কেটে যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ইতিবাচক ধারায় আসবে ‘

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা তার আগের মাসের (ডিসেম্বর) চেয়ে ২৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার বেশি। কারণ ওই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে মোট ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা।

আলোচিত মাস জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ৩৫ কোটি ডলার। এরপরই রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ডলার, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ডলার এসেছে এ মাসে।

জানুয়ারিতে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি রাষ্ট্রায়ত্ত ডিবিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপরের মাস সেপ্টেম্বর থেকে টানা পাঁচ মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থেমে যায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি  ৬৯ লাখ ডলার। এরপরই কমতে থাকে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে প্রায় ১৭০ কোটি ডলার বা ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার। আর সদ্যবিদায়ি জানুয়ারি মাসে এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

উল্লেখ্য, দেশে ডলারের তীব্র সংকট চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। সংকট কাটাতে বিলাসীপণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপও নিয়েছে কেন্দ্রীয় বাংক। তবুও সংকট কাটছে না। আর ডলার সংকট দূর করতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত জরুরি আমদানির দায় মেটাতেই এ ডলার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

এরপরও আটকে আছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। ডলার সংকটে আমদানিকারকদের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে দেশের অনেক ব্যাংক। এসব সমস্যার সমাধান দিতে রিজার্ভ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৮৫০ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করেছে। দেশের ইতিহাসে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি।