× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মিউচুয়াল ফান্ডে আস্থার সংকট

আনিছুর রহমান

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৬ পিএম

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৭ পিএম

মিউচুয়াল ফান্ডে আস্থার সংকট

দেশের মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর আস্থা নেই বিনিয়োগকারীদের। ফলে ৩৬টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৪টির সম্পদমূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য অনেক কম, বিশ্বব্যাপী যা সম্পদমূল্যের সমান সমান কিংবা সামান্য কম-বেশি থাকে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, মূলত বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ নিয়ে অনিয়ম, অদক্ষতা ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যকে সুবিধা দেওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। তাই কোম্পানিগুলো যে সম্পদমূল্য ঘোষণা করে, তার চেয়ে ৫০ শতাংশ কমেও লেনদেন হয় মিউচুয়াল ফান্ড। 

দেশের পুঁজিবাজারের মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলো পরিচালিত হয় ৮টি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনায়। এর মধ্যে এককভাবে ১০টি মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং রেস ম্যানেজমেন্ট পিএলসি। ৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপক হিসেবে আছে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড।

বাকি ১০টির মধ্যে এইমস বাংলাদেশ ২টি, এশিয়ার টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার ১টি, ক্যাপিটাল অ্যান্ড অ্যাসেট পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট ২টি, স্ট্র্যাটেজিক ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট ৩টি, ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ২টি মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপনা করছে। 

এই ৮টি সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি পরিচালনা করছে ৫ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকার সম্পদ ব্যবস্থাপনা করছে রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, যা এ খাতের মোট সম্পদের ৫০ শতাংশ। আর মিউচুয়াল ফান্ড খাতের মোট সম্পদের ১৬ শতাংশ বা ৯৩১ কোটি টাকা ব্যবস্থাপনা করছে এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং ১৩ শতাংশ বা ৭৯৬ কোটি টাকা আছে আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনায়। 

এসব মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারমূল্য ও সম্পদমূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুইটি বাদে সবগুলো মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদমূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য অনেক কম। সম্পদমূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি এমন ফান্ডগুলো হলো- প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড এবং ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদমূল্য ১৪ টাকা ৩৬ পয়সা আর বাজারে লেনদেন হচ্ছে ১৪ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ বাজারমূল্য সম্পদমূল্যের সমান। এদিকে ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদমূল্য ৯ টাকা ৫৫ পয়সা, কিন্তু বাজারমূল্য ৯ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ এই মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদমূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য ৪ শতাংশ বেশি।

কিন্তু ৩৬টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৪টিরই সম্পদমূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য কম। এর মধ্যে রেস ম্যানেজমেন্টের অধীনে পরিচালিত ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, সম্পদমূল্যের চেয়ে ৫২ শতাংশ কম দামে বেচাকেনা হচ্ছে। এই মিউচুয়াল ফান্ডটি লেনদেন হচ্ছে ৫ টাকায়, অথচ এর সম্পদমূল্য দেখাচ্ছে ১০ টাকা ৪৭ পয়সা। মেয়াদি এই মিউচুয়াল ফান্ড প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে যারা নিয়েছিলেন তারা আছেন লোকসানে। অন্তত ১২টি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন অসংখ্য বিনিয়োগকারী। 

রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট

আটটি সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির মধ্যে সম্পদমূল্য ও বাজারমূল্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে রেস ম্যানেজমেন্ট। এর ব্যবস্থাপনায় থাকা ১০টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩টি সম্পদমূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য ৩০-৪০ শতাংশ কম। বাকিগুলো লেনদেন হচ্ছে সম্পদমূল্যের ৪০-৫২ শতাংশ কমে। এর মধ্যে সবচেয়ে কমে বিক্রি হচ্ছে ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের এই ফান্ডটির বাজারমূল্য ৫ টাকা, যার প্রতিটি ইউনিটের সম্পদমূল্য ১০ টাকা ৪৭ পয়সা। এটি সম্পদমূল্যের ৫২ শতাংশ কমে লেনদেন হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় থাকা ১০টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৬টি সম্পদমূল্য নেমেছে ১০ টাকার নিচে।

এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট

এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে ৬টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড। আকারের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফান্ড ব্যবস্থাপনা করে প্রতিষ্ঠানটি। এই সম্পদ ব্যবস্থাপকের অধীনে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারমূল্য সম্পদমূল্যের চেয়ে কমপক্ষে ২৪ শতাংশ কম। আর সর্বোচ্চ ৩৯ শতাংশ কমে লেনদেন হচ্ছে এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচুয়াল ফান্ড-১। এর সম্পদমূল্য ১০ টাকা ৪৩ পয়সা, বাজারমূল্য ৬ টাকা ৪০ পয়সা। বাকি ৫টি মিউচুয়াল ফান্ড কমপক্ষে ৩০ শতাংশ দামে লেনদেন হচ্ছে। 

আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করছে ১০টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড। এরমধ্যে দুইটি বাদে বাকিগুলোর সম্পদমূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য কম। এরমধ্যে ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হচ্ছে সম্পদমূল্যের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি দরে। আর প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হচ্ছে ১ শতাংশ বেশিতে। বাকি ৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবলি মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদমূল্য ও বাজারমূল্য কাছাকাছি রয়েছে। আর সম্পদমূল্যের চেয়ে সবচেয়ে কমে বিক্রি হচ্ছে আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড। এ ফান্ডটির সম্পদমূল্য ৯ টাকা ১৯ পয়সা, কিন্তু লেনদেন হচ্ছে ৬ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ ২৯ শতাংশ কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিটি ইউনিট। বাকি ৭টি মিউচুয়াল ফান্ড সম্পদমূল্যের চেয়ে ১১ থেকে ২৬ শতাংশ কমে লেনদেন হচ্ছে। 

এইমস অব বাংলাদেশ

বর্তমানে এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে দুইটি মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে গ্রামীণ ওয়ান, স্কিম-২ এর সম্পদমূল্য ১৯ টাকা ৮ পয়সা, অথচ বাজারমূল্য ১৫ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ এ মিউচুয়াল ফান্ডটি সম্পদ মূল্যের চেয়ে ২০ শতাংশ কম দামে শেয়ারবাজারে লেনদেন হচ্ছে। অপর মিউচুয়াল ফান্ড রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদমূল্য ১৩ টাকা ৬০ পয়সা হলেও বাজারমূল্য ৯ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ এটিও সম্পদমূল্যের চেয়ে ২৭ শতাংশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে। 

স্ট্র্যাটেজিক ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট

স্ট্র্যাটেজিক ইকুইটি ম্যানেজমেন্টের পরিচালনায় আছে ৩টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড। এসব ফান্ডের সম্পদমূল্যের চেয়ে ১১-১৫ শতাংশ কমে পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে। এরমধ্যে এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ডের সম্পদমূল্য ১০ টাকার নিচে নেমেছে। অর্থাৎ ফান্ডটির সম্পদ ভিত্তি বছরের চেয়েও কম। 

ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট

দুইটি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করে ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। এই দুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদমূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য ২৮-৩৬ শতাংশ কম। এরমধ্যে ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদমূল্যের চেয়ে ৩৬ শতাংশ কমে লেনদেন হচ্ছে। এর সম্পদমূল্য ১১ টাকা ৩৭ পয়সা হলেও বাজারমূল্য ৭ টাকা ৩০ পয়সা।

এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার

এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছে এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার লিমিটেড। এই ফান্ডটির সম্পদমূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য ৬ শতাংশ কম। ফান্ডটির সম্পদমূল্য ১০ টাকা ২৭ পয়সা এবং বাজারমূল্য ৯ টাকা ৭০ পয়সা।

ক্যাপিটাল অ্যান্ড অ্যাসেট পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট

দুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছে ক্যাপিটাল অ্যান্ড অ্যাসেট পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট। এ দুইটি ফান্ডের সম্পদমূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য কম। এরমধ্যে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-১ এর সম্পদমূল্য ১২ টাকা ১১ পয়সা হলেও বাজারমূল্য ৯ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ ১৮ শতাংশ কম মূল্যে বেচাকেনা হচ্ছে ফান্ডটি। অপর মিউচুয়াল ফান্ড সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ডটির সম্পদমূল্য ১২ টাকা ১৩ পয়সা এবং বাজারমূল্য ১১ টাকা ৫০ পয়সা।

এ বিষয়ে এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সায়ীদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারই তো অস্বাভাবিক, সেখানে মিউচুয়াল ফান্ড স্বাভাবিক আচরণ করবে সেটা ভাবার কারণ নেই। ফ্লোরপ্রাইস কি স্বাভাবিক? এতো অস্বাভাবিকের মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদমূল্য ও বাজারমূল্য নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন।’ 

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী-রুবাইয়াত-উল-ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্তমান কমিশন আসার পর যেসব মিউচুয়াল ফান্ড এসেছে, এগুলোর অবস্থা ভালো, তবে আগের মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অবস্থা কিছুটা খারাপ। এসব মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। স্বচ্ছতা বাড়াতে নিরীক্ষা ও মনিটরিংয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতা বাড়লে ধীরে ধীরে আস্থাও বাড়বে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা