× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাহাজ সাগরে, চাপ ভোক্তার ঘাড়ে

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:২০ এএম

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:১৪ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ব্রাজিল থেকে ৫৫ হাজার টন চিনি নিয়ে ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে আসে ‘এমভি ট্রঅং মিন প্রসপারিটি’ জাহাজ।

চুক্তি অনুযায়ী, ২২ দিনের মধ্যেই জাহাজ থেকে সবগুলো চিনি খালাসের কথা ছিল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের। ২২ দিনের জায়গায় এখন ১০৫ দিন (সাড়ে তিন মাস) পার হলেও জাহাজটি থেকে চিনি খালাস শেষ হয়নি। জাহাজটিতে এখনো ১৫ হাজার টনের বেশি চিনি আছে বলে জানিয়েছে জাহাজটির লোকাল শিপিং এজেন্ট। লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) জটিলতার কারণেই জাহাজ থেকে চিনি খালাস শেষ করা যায়নি বলে জানিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু সুগার মিল লিমিটেড। সময় মতো চিনি খালাস করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে প্রতিদিন ক্ষতিপূরণ গুণতে হচ্ছে ২৫ হাজার ডলার (২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা)। 

এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে ‘এমভি ট্রঅং মিন প্রসপারিটি’ জাহাজের লোকাল এজেন্ট জিএম শিপিংয়ের জেনারেল ম্যানেজার মো. ইউসুফ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী এমভি ট্রঅং মিন প্রসপারিটি জাহাজ থেকে প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ টন করে চিনি খালাসের কথা ছিল। সেই হিসেবে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর ২২দিনের মধ্যে খালাস শেষ করে চলে যাওয়ার কথা ছিল। ২২ দিনের পর থেকেই জাহাজটি যতদিন বর্হিনোঙরে বসে থাকবে তার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ হাজার ডলার (২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা) ক্ষতিপূরণ গুণতে হবে।’

এই হিসেবে জাহাজটি ১০৫দিন কুতুবদিয়া বর্হিনোঙরে বসে থাকার বিপরীতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৮৩ দিনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার ডলার করে ৮৩ দিনে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অন্তত ২০ লাখ ৭৫ হাজার ডলার বা ২১ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১০৬ টাকা হিসেবে)। 

শুধু এমভি ট্রঅং মিন প্রসপারিটি জাহাজটি নয়, এস আলম গ্রুপের চিনি নিয়ে আসা ‘এমভি একলিস’ নামের আরেকটি জাহাজও এক মাস ধরে চিনি নিয়ে সাগরে ভাসছে। ডলার সংকটে আমদানিমূল্য পরিশোধ করতে না পারায় চিনিগুলো খালাস করতে পারছেনা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এমভি একেলিস জাহাজটি গত ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের কুতুবদিয়া বর্হিনোঙরে এসে পৌঁছায়। বর্তমানে জাহাজটি সেখানেই অবস্থান করছে। যথা সময়ে চিনিগুলো খালাস করতে না পারায় একদিকে বাজারে চিনির সংকট তৈরি হবে। অন্যদিকে বেড়ে যাবে চিনির দাম। কারণ চিনিগুলোর আমদানির বিপরীতে যতটাকা খরচ হবে সেটি সমন্বয় করেই বাজারে বিক্রি করবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। তাই দিন শেষে লোকসানের এই বিপুল পরিমাণ টাকা ভোক্তাদেরকেই গুণতে হবে। যা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

গত ২৬ জানুয়ারি দেশের চিনি পরিশোধনকারীদের সংগঠন-বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়েছে। ১ ফেব্রæয়ারি থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এখনই বাড়তে শুরু করে চিনি দাম। 

শিপিং এজেন্ট সূত্রে জানা যায়, জাহাজটিতে বর্তমানে ২৫ হাজার টনের মতো চিনি আছে। এর মধ্যে দুটি এলসির বিপরীতে ১০ হাজার টনের আমদানিমূল্য গত সপ্তাহে পরিশোধ করার পর দুই দিন আগে সেগুলোর খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাকি ১৫ হাজার টনের এলসি এখনও করা হয়নি। এই চিনিগুলো কবে নাগাদ খালাস করা যাবে সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেনি জাহাজটির লোকাল এজেন্ট। 

সর্বশেষ ১০ হাজার টন খালাসের জন্য গত ২৪ জানুয়ারি কাস্টমস হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়। চিনিগুলোর শুল্কায়ন মূল্য ছিল ৫৩ দশমিক ০৯ টাকা। এর সঙ্গে বিভিন্ন শুল্ককর ৬০ শতাংশ যোগ করলে এসব চিনির আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ৮৩ টাকা। এই চিনিই খোলা বাজারে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১০৬ থেকে ১০৭ টাকায়।

জিএম শিপিংয়েল জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ ইউসুফ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাকি ১৫ হাজার টন চিনি কবে নাগাদ খালাস করা যাবে সেটি আমরা বলতে পারছি না। আমদানিকারকরা কখন এলসি করতে পারবেন। এখন তো ডলার সংকট, তারা (আমদানিকারক) এলসি করতে পারলেই চিনিগুলো খালাস করা সম্ভব হবে।’

দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সরকার এলসির ব্যবস্থা করে দিয়েছে আশা করছি খুব শিগগির জাহাজ থেকে চিনিগুলো খালাস করা যাবে। মূলত এডিশনাল কনফারমেশনের জন্যই খালাস প্রক্রিয়া আটকে ছিল। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অন্য দেশের ব্যাংক অনেক সময় ঝুঁকি নেয়, আবার অনেক সময় ঝুঁকি নেয় না। বাংলাদেশের ব্যাংক নিয়ে নৈতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় বাইরের ব্যাংকগুলো মনে করেছে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কাছে টাকা নেই। তাই তারা ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি।’ 

সময় মতো চিনি খালাস করতে না পারায় অনেক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সব সময় একই রকম যায় না। কখনও ভালো, আবার কখনো খারাপ সময়ের মধ্যদিয়ে যেতে হয়। আমরা এখন ওই ধরনের একটি সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। তবে এটি খুব শিগগির কেটে যাবে ইনশাল্লাহ।’

একটি জাহাজ বর্হিনোঙরে বসে থাকলে তার জন্য যে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় সেটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ।

প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘বর্হিনোঙরে জাহাজ বসে থাকলে এর জন্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। বসে থাকার কারণে জাহাজটির পরিচালন ব্যয় (নাবিকদের বেতন, তেল, খাওয়া-ধাওয়াসহ আনুসঙ্গিক খরচ) ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমদানিকারকের কাছ থেকে নেওয়া হয়। একেকটি জাহাজের পরিচালন ব্যয় একেক রকম। এই ক্ষেত্রে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের চুক্তির ভিত্তিতেই এটি নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত একটি বড় জাহাজ একদিন বসে থাকলে এর জন্য কমপক্ষে ২০ হাজার ডলার, উপরে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ গুণতে হয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা