প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৩ পিএম
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৫৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ফলে এক সপ্তাহে দাম অনেকখানি বেড়ে যাওয়ার পরের সপ্তাহে তা আবার কমতে দেখা যায়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশ চীনের চাহিদা বাড়ায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির আশা করেছিল উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশগুলো। তবে প্রত্যাশার চেয়ে চীনের চাহিদা কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে কমেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮১ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ কমে ৮৬ ডলার ৬৬ সেন্ট হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ ডলার ৩৩ সেন্ট বা ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৭৯ ডলার ৬৮ সেন্ট নির্ধারিত হয়েছে। যা সপ্তাহের শুরুর দিকের তুলনায় ২ শতাংশ কম।
এদিকে এশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে বাল্টিক বন্দর থেকে ৫০ শতাংশ রপ্তানি বাড়িয়েছে রাশিয়া। চীনের বাজার উন্মুক্ত হওয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রপ্তানি বাড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও। রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফেব্রুয়ারির ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানি ৯ লাখ থেকে বেড়ে ১০ লাখ হতে পারে।
আগামী মাসে জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্কের আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাগেইন ক্যাপিটাল এলএলসির অংশীদার জন কিলডফ। তিনি বলেন, ‘আগামী মাসে যদি রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ বাড়তে থাকে, তাহলে বাজারে তেলের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনের মাত্রা পর্যালোচনা করতে আগামী সপ্তাহে মিলিত হবে ওপেক প্লাসের প্রতিনিধিরা। তবে উৎপাদন নীতিতে বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে মনে করে মধ্যপ্রাচ্য ও রাশিয়ার মিত্রদেশগুলোর জ্বালানি তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন ওপেক প্লাস।
দ্রুত সময়ের মধ্যে চীনের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি নিয়ে ব্যবসায়ীরা সন্দিহান বলে জানিয়েছে ওএএনডিএ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেলের বাজার বিশ্লেষণী এবং তথ্য সরবরাহকারী এই প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মোয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অপরিশোধিত জ্বালনি তেল রপ্তানিকারকরা তাদের চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারে। ফলে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীন তাদের অপরিশোধিত জ্বালনি তেল আমদানি কতটা বাড়াবে তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা সন্দিহান। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের পূর্বাভাসে দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মজুদ কমানোর কথা বলা হয়েছিল। তবে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মজুদ বেড়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এর আগে সপ্তাহ ব্যবধানে জ্বালানি তেলের দাম কমেছিল ৮ শতাংশ। যা ২০১৬ সালের পর বিশ্ব জ্বালানি তেলের বাজারের সবচেয়ে বড় দরপতন। ২০২২ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। ফ্রান্সের মাল্টিন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি সোসাইট জেনারেলের এক বিশ্লেষক বলেন, গত ২৭ ডিসেম্বর শেষ হওয়া ২০২২ সালের কমোডিটি মার্কেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরব্যাপী সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়েছে জ্বালানি খাতে। বিশ্বে জ্বালানি তেল কেনাবেচায় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলার। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জি-৭-এর নিষেধাজ্ঞার পরও জ্বালানি তেল বিক্রি থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে রাশিয়া। এক বছরে এ খাত থেকে তাদের আয় ৩৪০ কোটি ডলার।
এদিকে আগামী ৩১ জানুয়ারি আবারও সুদের হার নির্ধারণ করবে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক-ফেড। এরই মধ্যে উচ্চ সুদের হারের বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। ফলে ফেডের আগামী বৈঠকে সুদের হার বাড়লে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সংকুচিত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।