প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:২৯ পিএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
অর্থনীতির চাকা সচল করতে শূন্য কোভিড নীতি শিথিল করছে চীন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং শূন্য-কোভিড নীতির বিরূপ প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি। কোভিড সংক্রান্ত লকডাউন কাটিয়ে এবার যাত্রী চলাচলের সুবিধার্থে বিমানের ফ্লাইট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশটিতে গড়ে জেট বিমানে জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশ চীনের চাহিদা বাড়ায় বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের কোভিড-১৯ লকডাউন শিথিল করা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার সিদ্ধান্তে সোমবার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৭৪ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৯ দশমিক ৭৮ ডলারে অবস্থান করছে। একই জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট-ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৭৪ সেন্ট বা ১ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলার ৩ সেন্টে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম এবার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাল।
ওদিকে ব্যাংকঋণে সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে চাহিদা কমায় জ্বালানি তেলের বাজারে দেখা দিয়েছিল উদ্বেগ। এদিকে গত শুক্রবার উভয় মানদণ্ডেই জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ ডলারের বেশি কমেছিল। তবে সিএমসি মার্কেটস বিশ্লেষক টিনা টেং বলছেন, ‘চীনে কোভিডের প্রভাব বাড়তে থাকা সত্ত্বেও, পুনরায় নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সিদ্ধান্তে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছি।’
স্যাটেলাইট ডেটা ফার্ম কায়রোসের মতে, চীনের শূন্য কোভিড নীতির আকস্মিক সমাপ্তি দেশটির বিমান চালনা খাতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে। জেট বিমানগুলোতে দুই সপ্তাহের মধ্যে জ্বালানির চাহিদা গড়ে বেড়েছে ৭৫ শতাংশ বা প্রতিদিন ১ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল। দেশটির একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছরের জানুয়ারি নাগাদ গড়ে চীনের দৈনিক যাত্রীবাহী ফ্লাইটের পরিমাণ ২০১৯-এর জায়গায় ফিরে আসবে, যা বর্তমান সময়ের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি। তবে জ্বালানি তেলের বাজার বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান হাইটং ফিউচারের বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘জ্বালানি তেলের বাজার অনেকটাই চীনের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। এখন পর্যন্ত এই বাজারজুড়ে ইতিবাচক সংকেত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি থেকে যেহেতু দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাই এ মুহূর্তে তাদের পুনরুদ্ধারের পথ ধীর ও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
আগামী বছরের অর্থনীতির গতিপথ নির্ধারণের জন্য একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে চীনের শীর্ষ নেতা এবং নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০২৩ সালের মধ্যে চীন ১৭ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইএনজি ব্যাংকের গ্রেটার চায়নার প্রধান অর্থনীতিবিদ আইরিস পাং বলেন, আগামী বছর চীনের প্রবৃদ্ধির প্রধান হাতিয়ার হবে রাজস্ব উদ্দীপনা ও যথাযোগ্য আর্থিক নীতি। আমরা আশা করি, আগামী বছর জিডিপির প্রায় ৮ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি থাকবে।'
জ্বালানি তেলের বাজার সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইউএস এনার্জি ডিপার্টমেন্ট। তাদের একটি ঘোষণায় বলা হয়, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে হবে এমন ক্রয়াদেশ এসেছে। দেশটি কৌশলগত কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পুনরায় ক্রয় শুরু করবে। ফলে জ্বালানি তেলের বাজার আবারও শক্তিশালী হবে।