প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫ ২১:৩২ পিএম
জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসির মধ্যে একটি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী জালালাবাদ গ্যাস লাফার্জহোলসিমকে আগামী দশ বছরে দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস সরবরাহ করবে, যা ২০২৬ সালের ১৮ জানুয়ারি ১৮ থেকে কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিদ্যুৎ ভবনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড ও স্পেনের রাষ্ট্রদূতরা, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবং উভয় প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে উভয় পক্ষকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। জ্বালানি খাতে ভর্তুকি অনেক বেশি এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন, অন্যথায় কোনো চুক্তি অনুমোদিত হবে না।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উপদেষ্টা বলেন, অন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো শহর কেন্দ্রিক হওয়ায় গ্যাসের চাপ কম হয়, এটি ছাতকে হওয়ায় গ্যাসের চাপ বেশি হবে। তিনি জানান, আগে চুক্তির যে অসুবিধা ছিল তা এখন অপসারণ করা হয়েছে এবং এই চুক্তিতে দুটি নতুন বিষয় সংযুক্ত হয়েছে: নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বার্কের অধীনে আনা হয়েছে, ফলে বার্কের মাধ্যমে মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি হবে।
উপদেষ্টা উপস্থিত তিন রাষ্ট্রদূতকে চুক্তির স্বাক্ষরের বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, এই চুক্তি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে আগ্রহ সৃষ্টি করবে। এই চুক্তি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত লাফার্জের অবদান ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন। তিনি এই খাতে আরও বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে উৎসাহিত করেন এবং এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এই চুক্তি বাংলাদেশে শিল্পের জন্য একটি স্থিতিশীল গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। তিনি আরও যোগ করেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী।
সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে লাফার্জের অবদানের প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে লাফার্জহোলসিম এই খাতে আরও বেশি অবদান রেখে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
স্পেনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে তাদের পরোক্ষ বিনিয়োগে অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি উল্লেখ করেন যে স্পেন গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে এবং বাংলাদেশ স্পেনের জন্য চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য।
লাফার্জহোলসিমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী সবার প্রচেষ্টার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তারা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে এবং এই ধরনের আরও চুক্তি হলে তারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
এটি শুধু গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরও নতুন সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসি’র মধ্যে আজ ঢাকার বিদ্যুৎ ভবনে দুইটি গ্যাস বিক্রয় চুক্তি (একটি শিল্প শ্রেণিতে এবং অপরটি ক্যাপটিভ পাওয়ার শ্রেণিতে) স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী জালালাবাদ গ্যাস লাফার্জ হোলসিমকে আগামী দশ বছরে দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস সরবরাহ করবে।
লাফার্জহোলসিমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী এবং জালালাবাদ গ্যাসের কোম্পানি সচিব জিতেন্দ্র কুমার দাস নিজ নিজ কোম্পানির পক্ষে উভয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানিও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন উপস্থিত ছিলেন।
জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেঙ্গলি, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসতিয়াগা ওচোয়া দ্যা চিনছেক্র, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান এবং জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বিডা, পেট্রোবাংলা, জেজিটিডিএসএল ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসি-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।