× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নতুন নোটের হরেক বিড়ম্বনা

আহমেদ ফেরদাউস খান

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫ ১৬:২০ পিএম

নতুন নোটের হরেক বিড়ম্বনা

২০, ৫০ এবং ১০০০ টাকার নতুন নোট বাজারে এসেছে গত ২ জুন। ১৬ দিন পার হয়ে গেলেও এখনও এটিএম, সিআরএম ও মেট্রোরেলের ভেন্ডিং মেশিন নতুন নোট চিনছে না। অনেকেই বিভিন্ন ব্যাংকের সিআরএম (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) বুথে নতুন নোট জমা দিতে পারছেন না। মেশিনগুলো নতুন নোট শনাক্ত করতে না পেরে সাধারণ কাগজ ভেবে তা বারবার প্রত্যাখ্যান করছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া প্রচার-প্রসারের অভাবে মফস্বলের অনেকেই নতুন নোট সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাই তারা এই নোটে লেনদেনে আগ্রহী নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মেশিনকে নতুন নোট চেনানোর কাজ চলছে। শিগগিরই এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। নতুন নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য গুণাবলি সিআরএম মেশিনে প্রোগ্রাম করে দিলেই কাজ করবে। সাধারণত এটি করতে ব্যাংকের মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে।

জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার নতুন নোট ছেড়েছে। শুরুতে ২০, ৫০ এবং ১,০০০ টাকার নতুন নোট ইস্যু করা হয়। ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে ১০০০ টাকার নতুন নোটে। সিআরএমে টাকা জমা দিতে গিয়ে অনেক গ্রাহকই ফিরে এসেছেন। মেশিনগুলো চিনতে না পেরে সাধারণ কাগজ ভেবে নতুন নোট ফেরত দিচ্ছেন। 

জাহিদ হাসান নামের এক গ্রাহক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু টাকা জমা দিতে পারিনি। কোনোভাবেই বুঝতে পারছিলাম না কেন এই সমস্যা হচ্ছে। আমার কাছে থাকা নতুন নোটগুলোর একটাও নেয়নি। পরে পুরনো নোট দিয়ে ট্রাই করে দেখলাম, সেগুলো নিচ্ছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রকৃত সমস্যা হলো ব্যাংকগুলো এখনও উদাসীন। ব্যাংকগুলো বিষয়টিতে অবহেলা করছে। ফলে নতুন নোট এটিএম ও সিআরএম মেশিনে নিচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নতুন নোটের পিচারস রয়েছে। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়ে মেশিনগুলোতে অ্যাডাপ্ট করে নিলেই হয়। বেসরকারি এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন দেওয়া হলে মেশিনে টাকা নিচ্ছে কি না তা তিনি এখনও জানেন না বলে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান। 

বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন নোট এটিএম বা সিআরএম মেশিনে চালু করতে সাধারণত ২-৩ মাস সময় লাগে। সঠিকভাবে সমন্বয় না করলে জাল নোট ঢুকে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

অন্য এক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কার্ড বিভাগের প্রধান বলেন, নকশা, আকার, সিকিউরিটি থ্রেড ও রঙ পরিবর্তনের কারণে এসব নোট বর্তমানে জাপানে সিমুলেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যা ২-৩ মাস সময় নিতে পারে। এটিএম বা সিআরএম মেশিনে স্ক্যান ও স্কোরিং সিস্টেমে-নোটটির নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ১০০ শতাংশ মিললে তবেই মেশিন সেটিকে গ্রহণ করে।

এ ছাড়া এটিএমে টাকা জমা বা তোলা সম্পর্কিত আরও কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। যেমন- টাকার সাইজ ও পুরুত্বে ভিন্নতা, ময়লা বা ভেজা নোট, ইত্যাদি। ফ্রিকশন ও সাকশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেশিন নোট ওঠায়, তাই সামান্য ভিন্নতা থাকলেই সেটি ব্যর্থ হয়।

জানা গেছে, এই টেমপ্লেট তৈরি করে জাপানি বহুজাতিক কোম্পানি হিটাচি বা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনসিআরের মতো কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানির কাছে নোটের নমুনা পাঠাতে হয় বা তাদের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে সরাসরি পরীক্ষা করেন। সব এটিএমে একযোগে টেমপ্লেট আপডেট করা সম্ভব নয়। যদিও কিছু ব্যাংকের টার্মিনাল মনিটরিং সফটওয়্যার আছে, তবে বেশিরভাগেরই নেই। ফলে প্রতিটি মেশিন আলাদাভাবে সফটওয়্যার বা টেমপ্লেট আপডেট করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মেশিনকে নতুন নোট জানানোর কাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়। নতুন নোট মেশিনে নিচ্ছে না। কারণ মেশিনকে নতুন নোট চেনাতে হয়। চেনানোর কাজ চলছে। মেশিনে কোডিং নতুন করে করতে হয়। তাই অনেক ব্যাংক যেসব দেশ থেকে মেশিন কিনেছে, মেশিনকে নতুন নোট চেনাতে সেসব দেশে নতুন নোট ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। একেক মেশিনে একেক রকম সময় নিচ্ছে। আমরা টাকা ছেড়েছি ঈদের আগে। তেমন সুযোগ পাইনি। ব্যাংকগুলো তো তেমন সুযোগ পায়নি।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমস্যার সমাধান নির্ভর করছে- কোন ব্যাংক কোন ধরনের মেশিন ব্যবহার করে তার ওপর। যেহেতু সমস্যা চিহ্নিত, সেহেতু এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সমস্যা সমাধানের পথে।’

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা আহসান হাবীব বলেন, ‘আমি মেট্রোরেলের ভেন্ডিং মেশিনে ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট দিয়ে টিকিট কাটতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হই। যেখানে পাশের কাউন্টারে গিয়ে হাতে হাতে টিকিট করি। লাইনে দাঁড়িয়ে সময় অপচয় হয়েছে। কবে সমাধান হবে তা জানেন না কর্তব্যরত টিকিট বিক্রেতা।’

মফস্বলের অনেকেই নতুন নোটে লেনদেনে অনাগ্রহী। তারা জানে না আদৌ এই নোট বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন রয়েছে। 

মফস্বলে নতুন নোটে লেনদেন করতে চাচ্ছেন না দোকানিরা। নতুন নোট বাংলাদেশ ব্যাংক যে ছাপিয়েছে- এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন এক দোকানি। জালাল আহমেদ নামে এক ব্যক্তি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমি সালামিতে পাওয়া নতুন নোট দিয়ে কিছু কিনতে গেলে দোকানি এই নোট নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা পুরনো নোট চায়। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। জনগণের কাছে পৌঁছানোর একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সাংবাদিকরা। আমরা আপনাদেরই শরণাপন্ন হব। তবে আরও প্রচার করা হবে। অন্য ব্যাংকগুলোও প্রচার করবে। পুরোপুরি চেঞ্জ হয়ে ৯টি নোট একসঙ্গে এর আগে কখনও বাজারে আসেনি। তাই একটা বিড়ম্বনাও আছে। প্রচার-প্রসারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চায়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা