প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫ ১৫:৫৫ পিএম
ঈদের ছুটি শেষে ধীরে ধীরে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। তবে বেশিরভাগ মানুষ এখনও গ্রামে অবস্থান করায় পুরোপুরি জমে ওঠেনি শহরের বাজারগুলো। ক্রেতা ও বিক্রেতার উপস্থিতি কম থাকলেও বাজারগুলোতে সবজি ও মাছের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অনেক সবজির দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে চাল, ডাল, তেল, ডিমের বাজার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জোয়ার সাহারা, ভাটারা, খিলক্ষেত ও কুড়িল বিশ্বরোড সংলগ্ন কুড়াতলি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
অধিকাংশ পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ভোক্তারা ভীষণভাবে চাপে পড়েছেন। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য মাছ ও সবজির দাম বেড়ে যাওয়া উদ্বেগজনক। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, সরকারকে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে।
সবজির বাজারে লাগামছাড়া দাম
সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। তবে টমেটোর দাম অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। যেখানে গত সপ্তাহে প্রতি কেজি টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে তা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও দেশি আলু ২০ টাকা, মিষ্টি আলু ৫০, বগুড়ার লাল আলু ৩০, কাঁচাকলা হালি ৫০, শসা ৬০ এবং লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া চিচিঙ্গা ৫০, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০-৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ এবং গোল বেগুন ৮০ টাকা, লতি ও কাঁকরোল ৭০-৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পুঁইশাক ৬০ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকা, বড় ডাঁটা ১০ টাকা, কাঁচামরিচ ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০-৬০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ হাসান বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সবকিছুর দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বিক্রিও কমেছে অনেক। আগে সকালেই ১২ হাজার টাকার বিক্রি হতো, এখন সারাদিনে হয় ৬ হাজার। ক্রেতা নেই বললেই চলে।
মাছের বাজারেও ঊর্ধ্বগতি
প্রতি কেজি মাছে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এখন মৃগেল মাছ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই ও কাতল ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, তেলাপিয়া (বড় সাইজ) ২৩০ টাকা, শিং ৩৫০-৩৬০ টাকা, পাঙাশ ১৭০-২০০ টাকা, পাবদা ৩৩০-৩৮০ টাকা, কৈ ২৪০-২৬০ টাকা এবং ট্যাংরা মাছ ৪৯০-৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ বলেন, ঈদের সময় মাছের চাহিদা কমে যায়। এখন শহরে মানুষও কম, তাই সরবরাহ কম হচ্ছে। দাম একটু বেড়েছে। তবে আগামী মাসে মাছের চাহিদা বাড়বে, তখন আরও ৫০-৬০ টাকা দাম বাড়তে পারে।
মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে
ব্রয়লার মুরগির দাম ঈদের পরে বেড়ে এখন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি হাইব্রিড মুরগি ২৩০-২৪০ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-২৯০ টাকা কেজিতে।
মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ আকাশ বলেন, কাস্টমার নেই। ঈদের পর সবাই এখনও গ্রামে। সকাল থেকে বসে আছি, পাঁচটা মুরগি মরেছে। কাস্টমার না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ছি।
এদিকে গরু ও ছাগলের মাংসের দোকান প্রায় সবই বন্ধ। কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার মাংস বিক্রেতা ওয়াসিম তালুকদার জানান, ঈদে ঘরে ঘরে কোরবানির মাংস থাকায় আমাদের মাংস চলবে না। তাই পুরো সপ্তাহ দোকান বন্ধ রাখছি। আগামী সপ্তাহ থেকে দোকান খুলব। তখন বিক্রি বাড়বে। ঈদের আগে গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি এবং খাসির মাংস ১০০০-১১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
কুড়াতলি বাজারে আসা ভোক্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতিদিনের বাজার করতে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে যেই সবজি ৫০ টাকায় কিনেছি, আজ তা ৮০ টাকায়। মুরগি-মাছ তো আকাশছোঁয়া।
স্থিতিশীল চাল, ডাল, তেল ও ডিমের বাজার
খিলক্ষেত আড়তের চাল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, চালের বাজারে এখনও বড় ধরনের পরিবর্তন নেই। নাজির, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৪-৮৫ টাকা, মিনিকেট ডায়মন্ড ৮৫-৯০ টাকা, রশিদ মিনিকেট ৭০-৭৫ টাকা। আটাশ চাল ৫৫, মোটা চাল ৫০-৫৫ টাকা। পোলাওয়ের চাল চিনিগুঁড়া ১১০, পুষ্টি পোলাও ১৪০, প্যাকেটজাত পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আটা ও ময়দার বাজারেও তেমন বড় পরিবর্তন নেই। খোলা আটা ৪০-৪৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৪৮-৫৫ টাকা, খোলা ময়দা ৫০-৬০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তেল বাজারে বোতলজাত সয়াবিন ১৯০ টাকা লিটার, পাঁচ লিটারের বোতল ৯২০ টাকা। খোলা সয়াবিন ১৬৫-১৭০ টাকা, বোতলজাত পাম অয়েল ১৫৫-১৬০ টাকা, খোলা পাম অয়েল ১৫০-১৫৪ টাকা এবং সরিষার তেল বোতলজাত ৩২০ টাকা, খোলা ২২০ টাকা।
ডিমের বাজারও তুলনামূলক স্থির। প্রতি হালি ডিম ৪৫-৪৬ টাকা, ডজন ১৩০-১৩৫ টাকা। লেয়ারের ডিম ১২৫ টাকা, হাঁসের ডিম হালি ৭০ টাকা এবং কোয়েলের ডিম ডজনপ্রতি ৩৫ টাকা।