হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫ ২১:৫৭ পিএম
কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জটের যেই ভয়াবহ অবস্থার আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেটি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। ২৫ মে রাতে কর্মসূচি স্থগিত করার পর এই তিন দিনে ১২ হাজার ৩৩৪ একক কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে বন্দর থেকে। যেখানে বুধবার (২৮ মে) এক দিনেই কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে ৫ হাজার ৪০ একক। এতে বন্দরে কমতে শুরু করেছে কন্টেইনার জট।
কর্মবিরতির কারণে যেখানে বন্দরে ডেলিভারির অপেক্ষায় থাকা কন্টেইনারের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। কন্টেইনার ডেলিভারি বেড়ে যাওয়ায় এখন এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজারে। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার বন্দরে ডেলিভারির অপেক্ষায় রয়েছে ৪১ হাজার ৮১৩ একক কন্টেইনার।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ পারসোনেল অফিসার মো. নাসির উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি এখন অগ্রগতি হয়েছে। আজকে এক দিনেই বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে ৫ হাজার ৪০ একক। যেটি গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কাস্টমস কর্মকর্তারা আরেকটু তৎপর হলে বন্দরে ডেলিভারির অপেক্ষায় থাকায় কন্টেইনারের সংখ্যা ঈদের আগেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। আজকেও ৯টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ বার্থিং হয়েছে। জাহাজ থেকে পণ্য লোড-আনলোড পুরোদমে চলছে।’
গত ১২ মে রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা- এই দুই ভাগে ভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর প্রতিবাদে এনবিআরের আওতাধীন কর অঞ্চল, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মঙ্গলবার তিন দিনের কলম বিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষণা অনুযায়ী, তিন দিন কর্মসূচি পালন করার পরও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় গত ২১ মে দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সারা দেশে কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মবিরতি শুরু করেন। প্রথম দিন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কার্যক্রম চলমান থাকলেও শনিবার ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাস্টম হাউসে কর্মবিরতি পালন করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এতে ওইদিন বন্ধ হয়ে যায় আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন। ওই ধারাবাহিকতায় রবিবারও সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের এই কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি বাধাগ্রস্ত হয়। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে প্রতিদিন বন্দর থেকে সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কন্টেইনার ডেলিভারি হতো। সেখানে এখন এই কন্টেইনার ডেলিভারি নেমে এসেছে তিন হাজারের নিচে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ মে বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি হয় ২ হাজার ৮১০ টিইইউস। রবিবার খালাস হয়েছে ২ হাজার ৭৪৯ টিইইউস। বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি কমে যাওয়ায় বন্দরে তৈরি হচ্ছে কন্টেইনার জট। কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলম বিরতির আগে বন্দরে যেখানে ডেলিভারির অপেক্ষায় ছিল ৩৭ হাজার টিইইউস কন্টেইনার। সেখানে রবিবার এটি ছাড়িয়েছে ৪২ হাজার। রবিবার বন্দরে ডেলিভারির অপেক্ষায় রয়েছে ৪২ হাজার ৩১৫ টিইইউস কন্টেইনার। সর্বশেষ মঙ্গলবার এটি ছাড়িয়ে যায় ৪৫ হাজার। ওই বন্দরে ডেলিভারির অপেক্ষায় ছিল ৪৫ হাজার ৩১১ একক কন্টেইনার।
তবে এই কন্টেইনার জট এখন আবার কমতে শুরু করেছে। গতকাল বুধবার ৫ হাজার ৪০ একক কন্টেইনার ডেলিভারি হওয়ার পর এখন এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজারে। এর আগে ২৬ মে বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি হয় ৩ হাজার ৭৫৫ একক, পরের দিন ২৭ মে কন্টেইনার ডেলিভারি হয় ৩ হাজার ৫৩৯ একক।
এভাবে কন্টেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক থাকলে ঈদের সময় যেই কন্টেইনার জটের আশঙ্কা করা হয়েছে সেটি হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন এভাবে গড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার করে কন্টেইনার ডেলিভারি হলে দুই তিন দিনের মধ্যে কন্টেইনার জট শেষ হয়ে যাবে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কর্মবিরতির কারণে আমরা যেই ধরনের কন্টেইনার জটের আশঙ্কা করেছিলাম। সেটি এখন কমতে শুরু করেছে, এভাবে ডেলিভারি হলে এক-দুই দিনের মধ্যে বন্দরে অপেক্ষমাণ কন্টেইনারের সংখ্যা ৪০ হাজারের নিচে চলে আসবে।’
এখন স্বাভাবিক হলেও ঈদের লম্বা ছুটিতে আবার কোনো কন্টেইনার জট তৈরি হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার ঈদে ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছুটিতে জাহাজে পণ্য ওঠানামাসহ বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু অফিস আদালত বন্ধ থাকায় তখন কন্টেইনার ডেলিভারি খুব একটা হয় না। তাই ঈদের বন্ধের আগে যদি প্রতিদিন বেশি পরিমাণে কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। তাহলে ঈদের বন্ধেও কন্টেইনার জট হবে না। এজন্য তিনি কাস্টমস কর্মকর্তাদের আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিজিএমইএ সাবেক সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে কন্টেইনার ডেলিভারি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কাঁচামাল সংকটে অনেক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। ডেলিভারি স্বাভাবিক হওয়ায় এখন কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহ বেড়েছে। কন্টেইনার ডেলিভারি যাতে এভাবে স্বাভাবিক থাকে সেই দাবি জানিয়েছেন এই পোশাক রপ্তানিকারক।’
রাকিবুল আলম চৌধুরী আরও বলেন, ‘কন্টেইনার ডেলিভারি এভাবে স্বাভাবিক থাকলে বন্দরে জট থাকবে না। এমনকি ঈদের সময়ও যেই কন্টেইনার জট তৈরি হয়, সেটি রোধ করা সম্ভব হবে।’