× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মৌসুমি হাওয়ায় জমজমাট ফ্রিজের বাজার

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫ ০৯:৪৭ এএম

আপডেট : ২২ মে ২০২৫ ১০:১৭ এএম

মৌসুমি হাওয়ায় জমজমাট ফ্রিজের বাজার

গরমে কাবু জনজীবন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আতঙ্ক মাথায় নিয়েও বেড়েই চলেছে ফ্রিজের চাহিদা। ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে এখন যেন একটাই স্লোগান ঠান্ডা থাকুন, ফ্রিজ নিন। বিক্রেতারা বলছেন, গ্রীষ্মের শুরু থেকেই ক্রেতাদের মধ্যে ফ্রিজ কেনায় প্রবল উত্সাহ দেখা যাচ্ছে। বড় ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে দেশি কোম্পানির পণ্যেরও চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ।

একসময় ফ্রিজ ছিল সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কারও বাসায় ফ্রিজ থাকলে সেটিতে ভাগ বসাত প্রতিবেশীরা। দামও ছিল আকাশছোঁয়া। তাই ফ্রিজ কেনার সক্ষমতা সবার ছিল না। যার বাসায় ফ্রিজ থাকতে, প্রতিবেশীদের কাছে তার কদরও ছিল সবচেয়ে বেশি। দিন বদলেছে। প্রান্তিক পর্যায়েও পৌঁছে গেছে ফ্রিজ। দেশীয় কোম্পানির দাপটে যেমন কমেছে দাম, তেমনি বেড়েছে এর চাহিদাও। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে ফ্রিজ। সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্তের পাশাপাশি বর্তমানে নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরেও জায়গা করে নিয়েছে ফ্রিজ।

বাজার ঘুরে জানা যায়, প্রতিদিনই রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে। তবে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র্র করে চাহিদা বেড়েছে। পুরো বছরে যা বিক্রি হয়, তার সমপরিমাণ বিক্রি হয় ঈদুল আজহায়। তাই বিক্রি বাড়াতে নানা ছাড় ও অফার দিচ্ছে ফ্রিজ কোম্পানিগুলো। 

ব্যবসায়ীদের দাবি, আগের তুলনায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যেমন বাড়ছে, তেমনি দেশীয় কোম্পানিগুলো ফ্রিজ উৎপাদন করায় কমেছে দামও। এই দুইয়ে মিলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছে ফ্রিজ। দিন দিন চাহিদা বাড়তে থাকায় বড় হচ্ছে ফ্রিজের বাজার। বিশেষ করে ঈদুল আজহায় এর চাহিদা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। ঈদ উপলক্ষে বিক্রেতারা নানা ছাড় ও উপহার ঘোষণা করেন, যা বিক্রিকে আরও চাঙ্গা করে তোলে।

ক্রেতারা জানান, ফ্রিজ এখন পরিবারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। মানুষ এখন সবার আগে যেসব পণ্য কেনে, তার মধ্যে ফ্রিজ অন্যতম। একসময় প্রতিবেশীদের ফ্রিজ দিয়ে চাহিদা পূরণ করত। কিন্তু এখন কেউই চায় না ফ্রিজের জন্য প্রতিবেশী কাউকে ডিস্টার্ব করতে। এটা শুধু শহর নয়, গ্রামেও এখন একই অবস্থা। বেশ কয়েকটা কোম্পানি তাদের সেল বাড়াতে ফ্রিজ প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কিস্তিসহ নানা সুবিধা দিয়ে এখন গ্রামের মানুষের কাছে ফ্রিজ বিক্রি করছে। ফলে ফ্রিজের বাজার যেমনি বড় হচ্ছে, তেমনি মানুষও ফ্রিজ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাই দিন দিনই বড় হচ্ছে বাজার।

ফ্রিজ উৎপাদনকারী কোম্পানি ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন বাসাবাড়িতে ফ্রিজ একটা আবশ্যিক পণ্যের নাম। দেশে এক যুগ আগে ফ্রিজের বার্ষিক চাহিদা ছিল ১০ লাখের মতো। বেড়ে এখন এর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩৩ থেকে ৩৫ লাখ। বর্তমানে দেশের চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশই দেশে উৎপন্ন হচ্ছে, বাকি ৫ শতাংশ ফ্রিজ আমদানি হচ্ছে। একসময় দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি ব্র্যান্ডের দাপট ছিল। গত দেড় দশকে সরকারের নীতি সহায়তা, দেশীয় বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর বিনিয়োগের কারণে বর্তমানে ৮৫ শতাংশের বেশি মার্কেট শেয়ার দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর। দেশি-বিদেশি ১৩টি কোম্পানি দেশে ফ্রিজ উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। ঈদকে ঘিরে এরই মধ্যে বাজারে ফ্রিজের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। তবে এই ঈদে ডিপ ফ্রিজের চাহিদা থাকে বেশি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবছর ৬০ শতাংশেরও বেশি ফ্রিজ দুই ঈদে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে রোজার ঈদের তুলনায় কোরবানির ঈদে ফ্রিজের চাহিদা একটু বেশিই থাকে। কারণ মানুষ কোরবানির পশুর মাংস ভালোভাবে সংরক্ষণে ফ্রিজ কিনে থাকে।

উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারে একাধিক ফ্রিজের ব্যবহার রয়েছে। এর বাইরে হোটেল-রেস্টুরেন্ট, সুপারশপ, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, অফিসসহ প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একাধিক ফ্রিজ ব্যবহৃত হচ্ছে।

দেশে রেফ্রিজারেটর উৎপাদনের প্রথম উদ্যোগ নেয় দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। এরপর একে একে যমুনা, মিনিস্টার, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ভিশন, ট্রান্সকম ও ওরিয়ন কারখানা স্থাপন করে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দেশে ফ্রিজ উৎপাদনের কারখানা গড়ে তুলেছে বিদেশি ব্র্যান্ড স্যামসাং, সিঙ্গার, ওয়ার্লপুল, কনকাসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড।

স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য ফ্রিজ কিনতে ব্যাংকগুলো দিচ্ছে ঋণ। তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি এই ঋণ নিয়ে এখন অনেকেই ফ্রিজ কিনছেন। আবার বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয়কেন্দ্রগুলো থেকেও কিস্তিতে ফ্রিজ দেওয়া হচ্ছে। এক মাস বা তিন মাসের মধ্যে পুরো টাকা পরিশোধ করতে পারলে কোনো বাড়তি ফি বা চার্জ নিচ্ছে না তারা। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ দিতে হচ্ছে।

ভোক্তারা তার সামর্থ্য অনুযায়ী এখন সহজে এই পণ্য কিনতে পারেন। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মাসিক কিস্তিতেও ফ্রিজ কিনতে পারেন তারা। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিলে কোনো সুদ নেওয়া হয় না।

ব্যাংকের পাশাপাশি কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের ঋণ দিয়ে থাকে। ঋণের পরিমাণ ৩০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ধরনের ঋণের মেয়াদ সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হয়। ব্যাংকগুলো এখন এসব ঋণে সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ থেকে ১২ শতাংশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাড়ে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। আগে সুদের হার আরও কম ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে তারল্য সংকট বাড়ায় এ খাতে সুদের হার বেড়েছে।

কিস্তিতে ফ্রিজ কেনার সুবিধা প্রসঙ্গে কথা হয় এক বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে। তিনি বলেন, কিস্তির মাধ্যমে খুব সহজেই ঝামেলাহীনভাবে গ্রাহক পণ্য কিনে ঘরে আনতে পারছেন। হিসাব করে চলা পরিবারের জন্য কিস্তিতে পণ্য কেনার বিষয়টি এখন বেশ স্বস্তিদায়ক। যেকোনো দামের পছন্দের ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাওয়া যায়। ৩ মাস থেকে শুরু করে ৬ মাস ও ১২ মাসের কিস্তিতে ফ্রিজের মূল্য পরিশোধ করা যায়।

এদিকে শুধু দেশীয় বাজারেই নয়, ফ্রিজ এখন রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। ফলে রপ্তানি আয় আসছে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই লাখ ইউনিট ফ্রিজ রপ্তানি হয়েছে। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ইরাক, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, অস্ট্রিয়াসহ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপের ৪০টির বেশি দেশে ফ্রিজ ও এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ রপ্তানি হচ্ছে। তবে সবেচেয় বেশি রপ্তানি হয় ভারতে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফ্রিজ রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১৭৫ কোটি টাকা আয় করেছে। দেশের শীর্ষ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন জানিয়েছে, গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় এক লাখ ইউনিট ফ্রিজ রপ্তানি করেছে। ২০২৬ সালের মধ্যে তিন লাখ ইউনিট ফ্রিজ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাদের। এ ছাড়া আগামী বছর ইলেকট্রো মার্ট রপ্তানি শুরু করবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ এক কর্মকর্তা। 

অন্যদিকে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলেছেন, আমাদের দেশ প্রযুক্তিতে পিছিয়ে রয়েছে। তাই প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রযুক্তি ও ফিচারের পণ্য উদ্ভাবনে গবেষণা, উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে জোর দিতে হবে। এ জন্য সরকারি বা বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে রপ্তানি বাজার আরও বড় হবে বলে আশা তাদের। 

এ বিষয়ে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা জোহেব আহমেদ বলেন, বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে এ খাতে অটোমেশন, গবেষণা ও উদ্ভাবনে জোর দিচ্ছে ওয়ালটন। এসব খাতে প্রতিনিয়ত তারা বিনিয়োগ করছে।

ইলেকট্রো মার্ট গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আফছার বলেন, ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন করলে বিনিয়োগকারীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পের বিকাশে এ খাতে আগামী ১০ বছরের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। যাতে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা করার পরিকল্পনা নিতে পারেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা