× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কলম বিরতিতে রাজস্ব কার্যক্রমে অচলাবস্থা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫ ২১:০৭ পিএম

কলম বিরতিতে রাজস্ব কার্যক্রমে অচলাবস্থা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে কলম বিরতি পালন করছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অংশীজনদের মতামত ও পরামর্শ না নিয়ে হঠাৎ করে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন তারা।

বুধবার (১৪ মে) সকাল ১০টা থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন কর অঞ্চল, কাস্টম হাউস ও ভ্যাট অফিসে কলম বিরতি পালন করছেন রাজস্ব প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, এই অধ্যাদেশ বাতিল করে আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হোক।

তিন দিনের কর্মসূচি

‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ নামে একাত্ম প্ল্যাটফর্ম থেকে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার বিরতি চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ও শনিবার বিরতি পালন করা হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। তবে এনবিআরের আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি কার্যক্রম এবং বাজেট প্রণয়ন-সংশ্লিষ্ট কিছু কাজ চালু রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজস্ব ভবনে কার্যত স্থবিরতা

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে এলেও কোনো দাপ্তরিক কাজ করছেন না। ফ্লোরগুলো ছিল ফাঁকা, লোকজনের আনাগোনা প্রায় ছিল না। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান অফিসে আসেননি। অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘আমরা দেশের স্বার্থেই চাই, সিদ্ধান্তগুলো সবার মত নিয়ে হোক। আলোচনা না করে যে অধ্যাদেশ আনা হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে।’

সরকারের পদক্ষেপ ও ভিন্নমত

গত সোমবার মধ্যরাতে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর মাধ্যমে প্রায় তিন দশক ধরে পরিচালিত এনবিআর বিলুপ্ত করা হয়। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে এর খসড়া অনুমোদন হয়। তবে এনবিআরের একজন সদস্য আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোনো বিরতি হচ্ছে না, আমার অফিসে কাজ চলছে। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্ত করছে।’

আন্দোলনের পেছনের ক্ষোভ

আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা বলছেন, এমন একটি গঠনমূলক সিদ্ধান্তের আগে অন্তত সংশ্লিষ্ট ক্যাডার ও অংশীজনদের মত নেওয়া উচিত ছিল। এনবিআর সংস্কার পরামর্শক কমিটি বা অর্থনীতির হাল নিয়ে কাজ করা শ্বেতপত্র কমিটির কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি। বরং একটি বিশেষ ক্যাডার তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত করেছে।

আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারদের দাবি, খসড়া অধ্যাদেশে এমন কর্মকর্তাদের পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে, যাদের রাজস্ব প্রশাসনে কাজের অভিজ্ঞতা নেই। এতে দক্ষতা, গতিশীলতা ও পদোন্নতির পথ সংকুচিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এটা হওয়া দরকার ছিল এবং হয়েছে। তবে এ ধরনের বড় পরিবর্তনে সংশ্লিষ্টদের উদ্বিগ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক। আশা করব, নতুন কাঠামোয় কারও চাকরি বা পদোন্নতির সমস্যা তৈরি হবে না।’

বর্তমানে এনবিআরের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের ৬ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের রাজস্ব আদায়ে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে বড় অংশ এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। বছরের এই সময়টিতে যখন করদাতারা রিটার্ন জমা দিচ্ছেন, বিভিন্ন রিটার্ন যাচাই চলছে, তখন এই অচলাবস্থা রাজস্ব সংগ্রহে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে। এমনকি বাজেট ঘোষণার আগেই সরকারকে রাজস্ব ঘাটতির দুঃসংবাদ পেতে হতে পারে।

যখন বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নিচে, তখন একটি প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা এই অনুপাত আরও কমিয়ে দিতে পারে। এটা সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ প্রণোদনা পরিকল্পনাগুলোর জন্যও হুমকি হয়ে উঠবে।

এই বাস্তবতায় পর্যবেক্ষকদের মত, রাজস্ব প্রশাসনের কাঠামো সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা হতে হবে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিচার করে। শুধু আমলাতান্ত্রিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা কিংবা বাহ্যিক চাপ মেটাতে নেওয়া সিদ্ধান্ত হয়তো কাঠামোগত সংস্কার নয়, বরং সংকটের নতুন সূত্রপাত।

উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এনবিআরকে নীতি ও প্রশাসনে ভাগ করার পরামর্শ দিয়েছিল। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও এই প্রস্তাব সামনে আসে। কিন্তু তখন তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এনবিআর সংস্কারে গঠিত হয় পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি। প্রশাসন, কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এই কমিটি গত ডিসেম্বরে দুটি পৃথক বিভাগ করার পক্ষে সুপারিশ করে। কিন্তু আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের অভিযোগ, চূড়ান্ত অধ্যাদেশে এই প্রতিবেদনের বেশিরভাগ সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা