প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ মে ২০২৫ ২২:০২ পিএম
২০২৪ সালের আগস্টে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে টানা ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্তত ৫৮ লাখ মানুষ। অনেক এলাকা দীর্ঘদিন জলাবদ্ধ ছিল। উদ্ধারকাজে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় হিমশিম খায় প্রশাসন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে দুর্যোগের আগাম প্রস্তুতি ও পরে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালাতে নতুন প্রকল্প নিয়েছে সরকার।
চার বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের নাম 'বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স' (বি-স্ট্রং)। গত ৭ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৩৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, বাকি ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দিচ্ছে সরকার।
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি, দুর্যোগকালীন উদ্ধার এবং পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় দক্ষতা ও গতিশীলতা আনা। এতে দেশের ৩৭টি বন্যাপ্রবণ জেলায় রেসকিউ বোট ও প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি করা হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় কম পানিতে চলতে সক্ষম অনেকগুলো রেসকিউ বোট কেনা হবে, যা ভবিষ্যতের বন্যায় দ্রুত সাড়া দিতে ভূমিকা রাখবে। দুর্গম এলাকায় আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার, খাদ্য সরবরাহ ও জরুরি চিকিৎসাসেবার জন্য বোটগুলো ব্যবহৃত হবে।
একনেক উইং সূত্র জানায়, প্রকল্পে ৩৭টি জেলার জন্য ৩৭০টি রেসকিউ বোট কেনা হবে, যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিটি বোটে ২০ থেকে ২৪ জন মানুষ বহন করা যাবে। কোস্টগার্ড ও অন্যান্য সংস্থার সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও ২০২৪ সালের বন্যায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বোটের অভাব প্রকট হয়ে ওঠে। সে অভিজ্ঞতা থেকেই অধিদপ্তর নিজস্ব সরঞ্জাম রাখার উদ্যোগ নিচ্ছে।
তবে প্রকল্পের সবচেয়ে বড় অংশ ব্যয় হবে কর্মসংস্থানে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও উচ্চ দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারগুলোর জন্য ই-জিপিপি কর্মসূচির আওতায় বছরে ১০০ দিন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে ৮ হাজার ৮৬১ জন মানুষের জন্য। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি টাকা, যা প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৫২ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, প্রকল্পের মূল ব্যয় ই-জিপিপি কার্যক্রম ঘিরেই। যেহেতু সাধারণ ই-জিপিপি এখন চালু নেই, তাই এ প্রকল্পের আওতায় তা বিশেষভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের বন্যাপ্রবণ ১০টি উপজেলায় ৩১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬০ কর্মদিবস সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কর্মসূচিটি একদিকে কর্মসংস্থান তৈরি করবে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জীবিকা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে।
প্রকল্পে আরও রয়েছে ১ হাজার ৪৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে বোট চালানো ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া, ১ হাজার ২৯৫ জন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যকে মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া, এবং পরামর্শক নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা।