আহমেদ ফেরদাউস খান
প্রকাশ : ১০ মে ২০২৫ ২১:৪২ পিএম
২০২৪ সালের জন্য তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন এবং লভ্যাংশ ঘোষণা করার জন্য ৩০ এপ্রিল বোর্ড সভা করেছে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ১৮ ব্যাংক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকায় তারা লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। পৃথকভাবে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৩০ এপ্রিল নির্ধারিত তারিখের এক দিন আগে তাদের সভা স্থগিত করেছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড়পত্র পাওয়ার পর এই ব্যাংকগুলো এখন তাদের বোর্ড সভা পুনরায় আহ্বান করবে। ইউনিয়ন ব্যাংক এখনও গত বছরের জন্য তাদের বোর্ড সভা ঘোষণা করেনি।
তালিকাভুক্তি বিধিমালার অধীনে, কোম্পানিগুলোকে তাদের অর্থবছর শেষ হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
বিলম্বিত জমা দেওয়ার জন্য দৈনিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা এড়াতে ব্যাংকগুলো সাধারণত বিএসইসির কাছ থেকে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময়সীমা আগামী ৩১ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আইনি বাধ্যবাধকতা শিথিল করে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকগুলো হলো- এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকগুলোর একটির একজন শেয়ারহোল্ডার-পরিচালক বলেন, লভ্যাংশ ঘোষণার জন্য ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন। এ ছাড়াও ইস্যুকারী সংস্থাগুলোকে কমপক্ষে তিন কার্যদিবস আগে বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করতে হবে। তবে অনুমোদন না পাওয়ায়, ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি।
বেশ কয়েকটি ব্যাংক পরিচালক এবং কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণার ওপর কঠোর শর্ত আরোপ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, খেলাপি ঋণ বা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের বিপরীতে প্রভিশনিংয়ে ঘাটতি থাকলে, অথবা যদি তারা স্থগিত সুবিধা গ্রহণ করে, তাহলে ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে অকার্যকর ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশনিং বজায় রাখতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে দুর্বল ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা স্থায়ী আমানত, পাশাপাশি হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের অধীনে শ্রেণিবদ্ধ ঋণ। ফলে অনেক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকায় শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়, লভ্যাংশ শুধুমাত্র চলতি অর্থবছরের মুনাফা থেকে প্রদান করতে হবে, সংরক্ষিত আয় থেকে নয়। এই কঠোর নিয়মের কারণে, অনেক ব্যাংকের এই বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করার সম্ভাবনা কম।
একজন ব্যাংক চেয়ারম্যান বলেছেন, ব্যাংকগুলো শিল্প এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে কমপক্ষে একটি ছোট লভ্যাংশ ঘোষণা করতে চায়। সেই কারণেই আমরা প্রভিশনিং প্রয়োজনীয়তায় কিছু শিথিলতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছি। তবে, আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশা করছি।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যাতে খেলাপি ঋণ এবং বিনিয়োগের জন্য প্রভিশনিং প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কোনো শিথিলতা দেওয়া যেতে পারে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
সরকার পরিবর্তনের পর ঋণ কেলেঙ্কারি এবং সুশাসন ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।
তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ১৪টি গত বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ইস্টার্ন ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংক তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বোচ্চ অর্থ প্রদানের ঘোষণা করেছে, প্রতিটি ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ এবং ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
লভ্যাংশ ঘোষণাকারী অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক এশিয়া (১০ শতাংশ নগদ এবং ১০ শতাংশ স্টক), ব্র্যাক ব্যাংক (১২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ এবং ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ স্টক), সিটি ব্যাংক (১২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ এবং ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ স্টক), ডাচ-বাংলা ব্যাংক (১০ শতাংশ নগদ এবং ১০ শতাংশ স্টক), যমুনা ব্যাংক (১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ এবং ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ স্টক), মিডল্যান্ড ব্যাংক (৩ শতাংশ নগদ এবং ৩ শতাংশ স্টক), মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (১০ শতাংশ স্টক), এনসিসি ব্যাংক (১৩ শতাংশ নগদ), প্রাইম ব্যাংক (১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ এবং ২ দশমিক ৫০ শতাংশ স্টক), পূবালী ব্যাংক (১২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ এবং ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ স্টক) এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক (১০ শতাংশ নগদ)। ট্রাস্ট ব্যাংক ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ এবং ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি, কারণ গত বছর উভয়ই লোকসান করেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মোট বাজার মূলধনে ব্যাংকিং খাতের অবদান সবচেয়ে বেশি, যা ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ। খাতভিত্তিক বাজার মূলধন ৬২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এই খাতের মূল্য-আয় অনুপাত সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ, যেখানে ১৬টি ব্যাংক তাদের অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে লেনদেন করছে। ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্য ৪৯ দশমিক ৬ টাকা, যেখানে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৯ টাকা।