× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভোজ্য তেল

বিশ্ববাজারের উল্টোচিত্র দেশে

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৪৩ পিএম

আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:০১ পিএম

বিশ্ববাজারের উল্টোচিত্র দেশে

গত ১৭ মার্চ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৮৩ রিংগিত। তার ঠিক এক মাস পর গত বুধবার আন্তর্জাতিক বাজারে ওই পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ১৩ রিংগিত। এই হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি পামঅয়েলের দাম কমেছে ৫৭০ রিংগিত, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৫ হাজার ৭০০ টাকা। লিটারে দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ১৫ টাকা। 

আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম এভাবে কমলেও বাংলাদেশের বাজারে এই চিত্র ভিন্ন। গত এক মাসে বাংলাদেশে বাজারে পামঅয়েলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ২০ দিনের ব্যবধানেই টনপ্রতি পামঅয়েলের দাম বেড়েছে অন্তত ৯ হাজার ৩০০ টাকা। গত ২৭ মার্চ খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩৩ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৪২০ টাকায়। সেখানে ১৬ এপ্রিল প্রতি মণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৭৭০ টাকায়। এই হিসেবে ২০ দিনের ব্যবধানে দেশীয় বাজারে পাইকারিতে লিটারপ্রতি পাম অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ৯ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ১৫ এপ্রিল লিটারে ১২ টাকা দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৫ এপ্রিল লিটারপ্রতি ১২ টাকা দাম বাড়িয়ে খুচরায় প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা দাম নির্ধারণ করলেও পাইকারি বাজারে দাম বাড়তে থাকে গত ২৭ মার্চ থেকে। খাতুনগঞ্জে এখন পাইকারিতে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। সরকার খুচরায় দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ায় এখন পাইকারিতে দাম আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

পাম অয়েলের ক্ষেত্রে নয়, সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে একই চিত্র। ২০ ফেব্রুয়ারি যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৩৫ মার্কিন ডলারে। সেখানে গত ৭ এপ্রিল প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৯৭৬ ডলারে। এই হিসেবে দেড় মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৫৯ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭ হাজার ১৯৮ টাকা। এই হিসেবে প্রতি লিটারে দাম কমেছে অন্তত ৭ টাকা। কিন্তু এর বিপরীত চিত্র দেশের বাজারে। গত ২৭ মার্চ খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩৩ লিটার) বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৮৩০ টাকায়, সেখানে এখন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এই হিসেবে ২০ দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি দাম বেড়েছে ৫২০ টাকা। লিটারে দাম বেড়েছে অন্তত ১৩ টাকা। 

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার পরও দেশের বাজারে দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভোজ্য তেল আমদানিতে সরকার এতদিন শুল্ক-কর ছাড় দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে বাজারে সয়াবিন এবং পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু গত ৩১ মার্চ থেকে এই শুল্ক ছাড় উঠে যাওয়ায় এখন তেল আমদানিতে বেশি খরচ পড়ছে। তাই দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে।

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ডিসেম্বর মাসে লিটারপ্রতি ৮ টাকা দাম বাড়ানো হয়। তাতেও লোকসান হচ্ছে দাবি করে ব্যবসায়ীরা ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর পুনরায় দাবি করলে সরকার শুল্ক-করে ছাড় দিয়ে মূল্য বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখে। গত ১৭ অক্টোবর ভোজ্য তেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন করের হার (মূসক/ভ্যাট) ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে সরকার। নভেম্বরে আরও কমিয়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই শুল্ক ছাড় বহাল থাকায় বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। এটি বাতিল হওয়ার পর ৩১ মার্চ থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে ভোজ্য তেলের দাম। এক পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ১৫ এপ্রিল লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা এবং পাম অয়েলের দাম ১২ টাকা বাড়াতে বাধ্য হয় সরকার। এতে ভোজ্য তেলের দাম আবারও বেড়েছে। দাম বাড়ানোর পর দুই দিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে অন্তত ৩০০ টাকা। লিটারে ৮ টাকা। 

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে ধারাবাহিকভাবে কমছে পাম অয়েলের দাম। একই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দামও কমছে। এক মাস আগের ‍তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম এখনও কম আছে। 

ট্রেডিং ইকোনমিকস’র তথ্য অনুযায়ী, গত ২ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ৫১৫ রিংগিতে। প্রতি রিংগিত ২৭ টাকা ৫৫ পয়সা হিসেবে ওই সময় প্রতি মেট্রিক টন পাম অয়েলের দাম ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৬ টাকা। অর্থাৎ প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছিল ১২৪ টাকা ৩৩ পয়সায়। দাম কিছুটা কমে এর দশ দিন পর গত ১১ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ২২২ রিংগিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ২৬৭ টাকায়। তখন প্রতি লিটার পামঅয়েল বিক্রি হয়েছিল ১১৬ টাকা ২৬ পয়সায়। সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল দাম আরও কমে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ১৩ রিংগিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ৫১১ টাকায়। প্রতি লিটার ১১০ টাকা ৫১ পয়সায়। 

অন্যদিকে একই ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৭৬ মার্কিন ডলারে। প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে ওই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১ লাখ ৩১ হাজার ২৭২ টাকায়। প্রতি লিটার ১৩১ টাকা ২৭ পয়সায়। এরপর দাম কমে গত ৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৯৮২ ডলারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৮০৪ টাকায়। তখন প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছিল ১১৯ টাকা ৮০ পয়সায়। গত ৭ এপ্রিল দাম আরও কমে প্রতি মেট্রিক টন বিক্রি হয় ৯৭৬ ডলারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৭২ টাকায়। প্রতি লিটার ১১৯ টাকা ০৭ পয়সায়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা