প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ২২:১৫ পিএম
আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। ঈদুল আজহার ছুটির আগে ২ জুন বাজেট ঘোষণা করা হবে। সংসদ না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, এবার ব্যয় বাড়ানোর বদলে সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ করে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। এডিপি কমিয়ে ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যেখানে চলতি বছর ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তবে পরিচালন ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক ঋণ কমে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা, আর বাজেটের খসড়া উপস্থাপন করেন অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। অংশ নেন পরিকল্পনা, বাণিজ্য ও খাদ্য উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী বাজেটের মূল আকার ৭ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে থাকা অনেক অনিয়মপ্রবণ ও বিলম্বিত প্রকল্প স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অতীতে নেওয়া বড় প্রকল্পগুলোর অনেক ক্ষেত্রে সময় ও খরচ বাড়ায় ঋণের চাপ বেড়েছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন মেগা প্রকল্প না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলায় এনবিআরের রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছর যা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে রাজস্ব আয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমাতে হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কম। ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশি-বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করবে। এর মধ্যে বড় অংশ আসবে বিদেশি উৎস থেকে। ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকেও অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যয় সীমিত রাখা হলেও, নিম্নআয়ের মানুষকে সহায়তা দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতেও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা চলতি বছরের ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশের চেয়ে কম। যদিও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি আরও কম প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট উপস্থাপন পদ্ধতি হবে ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো। এবার সংসদে বাজেট পেশ না হয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট ঘোষণা হবে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে। বাজেট ঘোষণার পরদিন অর্থ উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলন করবেন বলেও জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।