আহমেদ ফেরদাউস খান
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ২২:২২ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে তখন শিল্প খাতে আরেক দফা বাড়ল গ্যাসের দাম। যা নিয়ে হতাশা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এর প্রভাবে নতুন বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। এতে শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটারপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভে ৩১ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকেও ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা দরে বিল দিতে হবে। নতুন দর চলতি (এপ্রিল) মাসের বিল থেকেই কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে পড়ে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। নতুন করে তো কেউ ওই মূল্য দিয়ে বিনিয়োগে যাবে না। বর্তমান রেটে মূল্য পরিশোধ করতেই আমরা হিমশিম খাচ্ছি। সুতরাং এই রেটটা কিছু কমানোর জন্য অনুরোধ করব।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধির কারণে নতুন করে তো কেউ আসবে না। তাই দাম কমালে আমরা কিছুটা স্বস্তি পাব। আমি আর নতুন করে ক্যাপাসিটি বাড়াতে পারব না। ক্যাপাসিটি বাড়াতে হলে আরও দাম নির্ধারণ করতে হবে। আর নতুন করে বিনিয়োগে কেউ আসবে না। আমরা যারা পুরোনো আছি, আমাদেরই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই অনুরোধ করব, যাতে পুরোনোদের কিছু কমানো যায় কি না।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এটা নতুন করে চাপ সৃষ্টি করবে। যারা নতুন সংযোগ নেবে তাদের পুরোটাই বাড়বে। পুরোনোদের অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম। প্রতিশ্রুত শিল্প গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে। এতে করে শিল্প খাতে খরচ বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের ইউএসএর ১০ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হয়েছে। তারা ৯০ দিন স্থগিত করলেও ১০ শতাংশ এই সময়েও দিতে হবে। ওদিকে খরচ বেড়ে গেল, আবার এদিকেও খরচ বেড়েছে। আমাদের আগে ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দিতে হয় সেটা আমরা ৯ শতাংশ করে দিচ্ছি। সবকিছু মিলে আমাদের খরচ অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। আরও চাপ তৈরি হবে। গ্লোবালি আমাদের অর্ডার কমে যাবে। আমরা অর্ডার কমপ্লিট করতে পারব না।’
আমরা যেদিন শুনেছি দাম বাড়তে যাচ্ছে। আমরা সেদিন থেকেই বলে যাচ্ছি দাম না বাড়িয়ে আরও কমিয়ে দেন। তারপরও দাম বাড়িয়ে দিল। আমরা এখনও অনুরোধ করি, সরকার যেন দাম না বাড়ায় বলে তিনি জানান।
মঙ্গলবার নতুন দর ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। তিনি এ সময় দাবি করেন, দেশের গ্যাস কমার সঙ্গে সঙ্গে এলএনজি আমদানি বাড়তে থাকে। এলএনজির বাড়তি দাম দিতে গিয়ে চাপে পড়ে পেট্রোবাংলা। তারা ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। তবে গণশুনানিতে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী দাম বাড়ানো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। যে কারণে সমন্বয় করে কিছুটা দাম বাড়ানো হলো।
তিনি বলেন, ‘রাজস্ব চাহিদা ধরলে দাম অনেক বেশি বাড়াতে হতো। তাই ভোক্তার জন্য সহনীয় রাখতে ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভর্তুকিরও হিসাব করা হয়নি।’
নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রসঙ্গে জালাল আহমেদ বলেন, ‘বিনিয়োগ কমার বিষয়টা এখনই বলা যাবে না। নতুন বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে কি নাÑ তা নজরে রাখা হবে। নতুন যারা আসবে, তারা যদি দেখে তাদের পোষাবে, তাহলে তারা আসবে। তারা বিকল্প জ্বালানিও ব্যবহার করতে পারে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘শিল্প গ্রাহকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং শিল্প খাতকে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না করে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অসমতা করা হয়েছে। সংবিধানের প্রদত্ত মৌলিক সুরক্ষা দিয়েছেÑ তা লঙ্ঘনের শামিল।’