× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ২১ বছরে সর্বনিম্ন

আহমেদ ফেরদাউস খান

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪৬ পিএম

বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ২১ বছরে সর্বনিম্ন

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশে বেসরকারি খাতেও পড়েছে যার প্রভাব। গত ৭ মাসে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে, যা ফেব্রুয়ারিতে কমে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই অঙ্ক গত জানুয়ারিতে ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। দেশের ব্যাংকিং ও ব্যবসায়িক খাতে এটি ঘনীভূত সংকটেরই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। 

তারা বলছেন, বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপ এই সংকটকে আরও গভীর রূপ দিতে পারে। অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত। সেই খাতে ঋণপ্রবাহ ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ার অর্থ বিনিয়োগ থমকে যাওয়া। আর বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে না। ফলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণ বেড়েছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২০২৪-এর ডিসেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। তার আগে নভেম্বরে ৭ দশমিক ৬৬, অক্টোবরে ৮ দশমিক ৩০, সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ২০, আগস্টে ৯ দশমিক ৮৬, জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ এবং জুনে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ হয়েছিল।

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের এ নিম্নমুখী ধারা অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই ২০২২ সালের নভেম্বরে শুরু। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে গত ২১ বছরের বেসরকারি খাতে ঋণের তথ্য পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, নতুন বছরের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারির মতো এত কম প্রবৃদ্ধি এই ২১ বছরে হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাসেই সর্বনিম্ন। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারির পর আর কখনও এতটা কম হয়নি বেসরকারি খাতে ঋণ।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা আছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কম হয়েছে প্রবৃদ্ধি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতেও এই হার অপরিবর্তিত রাখা হয়।

সে হিসাবেই ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ কম। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার বাড়িয়েই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্বস্থি ছড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতিও। 

ব্যাংকঋণের সুদের হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করছেন না। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের আট মাস শেষ। এখনও দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে; দিন যত যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২২ সালের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে উঠেছিল। এরপর থেকে কমছেই। ২০২৩ সালের মে মাসে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। তার আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১১ দশমিক ২৮ আর মার্চে ১২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। নভেম্বরে ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অক্টোবর, সেপ্টেম্বর ও আগস্টে ছিল যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৯৩ ও ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

২০২১ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। করোনা মহামারির ধাক্কায় কমতে কমতে ওই বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৯৭ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর বিপরীতে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করছে। ফলে সব ধরনের ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনেরও একটা প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেশে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, অবস্থা ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে। কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সংঘাত-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে সবার মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড়- কেউই ঠিকমতো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছেন না।’ 

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এর অংশ হিসেবে নীতি সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়বেÑ এটাই স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। তবে বিনিয়োগ সম্মেলন হচ্ছে, আশা করি ভালো কিছু হবে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা