× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শেয়ার কারসাজিতে ফের জরিমানার মুখে সাকিব

আহমেদ ফেরদাউস খান

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৯ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজির দায়ে ফের জরিমানার মুখে পড়লেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এর আগেও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায়ে তাকে একাধিকবার জরিমানা দিতে হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসায়িক পার্টনার আবুল খায়ের হিরুর সঙ্গে মিলে শেয়ার কারসাজি করে আসছেন। এবার তার বিরুদ্ধে বীমা খাতে তালিকাভুক্ত ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এর আগে সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার অভিযোগে সাকিব, হিরু ও তার পরিবারের সদস্য, সাকিব-হিরুর প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক পার্টনার রয়েছে এমন ১০ ব্যক্তি এবং ৪ প্রতিষ্ঠানকে মোট ৩১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে সাকিব আল হাসানকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

তার আগে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির অভিযোগে সাকিব আল হাসানসহ ৪ ব্যক্তি এবং ৩ প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাকিবকে জরিমানা করা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।

ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাকিব, হিরু ও তার পরিবারের সদস্য, তাদের প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক পার্টনার রয়েছেন এমন ৮ ব্যক্তি এবং ৪ প্রতিষ্ঠানকে মোট ২ কোটি ২১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তাছাড়া ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সোনালী পেপার বোর্ড মিলস লিমিটেড ও এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসিকে সতর্ক করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

২০২৩ সালের ১৬ জুলাই থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারসাজি করে ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়। শেয়ার কারসাজিতে সাকিব-হিরুরা বিভিন্ন নামে একাধিক বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খুলে কোম্পানির শেয়ার সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে।

পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে বিএসইসি।

বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন পুনর্গঠিত বিএসইসি যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি করে আইন লঙ্ঘনের দায়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ১৭(ই)(২), সেকশন ১৭(ই)(৩), সেকশন ১৭(ই)(৫) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৪(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় ইশাল কমিউনিকেশন লিমিটেডকে ৮৫ লাখ টাকা, কনিকা আফরোজকে ৪৯ লাখ টাকা, মোনার্ক এক্সপ্রেসকে ২২ লাখ টাকা, মো. আবুল খায়ের হিরুকে ৩৭ লাখ টাকা, মোনার্ক মার্টকে ১৫ লাখ টাকা, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১৩ লাখ টাকা, সাকিব আল হাসানকে ৩ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতব্বরকে ৩ লাখ টাকা, লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজকে ৩ লাখ টাকা, হুমায়ন কবিরকে ৩ লাখ টাকা, মো. জাহেদ কামালকে ২ লাখ টাকা, মো. আশফাকুজ্জামানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসাবে ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির দায়ে মোট ২ কোটি ২১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এ কেলেংকারির মূল হোতা ছিলেন আবুল খায়ের হিরু। কারসাজিতে সহযোগী হিসেবে ছিলেন হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ, ব্যবসায়িক পার্টনার সাকিব আল হাসান, মো. জাহেদ কামাল, হুমায়ন কবির এবং হিরু-সাকিবের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মোনার্ক এক্সপ্রেস, মোনার্ক মার্ট, ইশাল কমিউনিকেশন ও লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজ। এর আগে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করার দায়ে এদের সবাইকে বড় অঙ্কের জরিমানা করে বিএসইসি।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে বিএসইসির শুভেচ্ছা দূত হিসেবে যুক্ত করেন তৎকালীন সংস্থাটির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন। ২০২০ সালেও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন পুনর্গঠিত বিএসইসি শুভেচ্ছা দূত হিসেবে সাকিবকে বহাল রাখে। এ সময়ে পুঁজিবাজারে আলোচিত বিনিয়োগকারী হিসেবে সাকিবের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তবে গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসি গত ২৮ আগস্ট শুভেচ্ছা দূতের পদ থেকে সাকিবকে বাদ দেয়। পুঁজিবাজারের আলোচিত কারসাজিকারী আবুল খায়ের হিরুর সঙ্গে একত্রে বড় বিনিয়োগ করেন সাকিব। অভিযোগ আছে, গত চার-পাঁচ বছরে পুঁজিবাজারে যেসব শেয়ার নিয়ে আবুল খায়ের হিরু সবচেয়ে বেশি কারসাজির ঘটনা ঘটিয়েছেন, এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ছিল সাকিবেরও।


বিএসইসির তদন্ত

সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরু ও তার পরিবারের সদস্য, তাদের প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক পার্টনার সাকিবসহ অন্যরা যোগসাজশ করে ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন করেন। কারসাজিকারীরা ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৪০ দশমিক ৯১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৭ দশমিক ৬৪ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩৬ দশমিক ৭৩ টাকা বা ৮৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ে যায়।

অভিযুক্তদের বিও হিসাব থেকে ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের বিপুল সংখ্যক শেয়ার লেনদেন করা হয়। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যেমে তারা একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। এর ফলে শেয়ার মূল্য অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সিকিউরিটিজ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের বক্তব্য এবং তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, উপস্থাপিত অভিযোগগুলো সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থি। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি।

এ বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সাকিব আল হাসান ও আবুল খায়ের হিরু ও তার পরিবারের সদস্যদের জরিমানা করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা