প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৩২ পিএম
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৪০ পিএম
উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রস্তাব। সরকার নানামুখী প্রদক্ষেপ ও পরিপত্র জারি করলেও এ ধারা থেকে বের হতে পারছে না। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়নে নেওয়া প্রকল্প তেমন একটি। ১৩৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি যেন অহেতুক ব্যয় প্রস্তাবের পসরা দিয়েই সাজানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটির যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে ১৬ খাতেই বিতর্কিত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি খাতের কোনো প্রয়োজনই নেই। আর বাকি ছয়টি খাতে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে সংশোধন করে পুনরায় প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। এজন্য প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, যেসব খাতের ব্যয় প্রস্তাব বাদ দেওয়ার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলোÑ অন্যান্য ভাতা, আপ্যায়ন খরচ, কুরিয়ার সার্ভিস বিল, অফিস ও স্টোর ভাড়া, আসবাবপত্র মেরামত ও সংরক্ষণ এবং ডিপিপি তৈরিসহ বিবিধ ব্যয় খাত। এ ছাড়া জনবলের গ্রুপ বিমা খাতটিও বাদ দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে যেসব খাতের ব্যয় প্রস্তাব অযৌক্তিক মনে করে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে সেগুলো হলোÑ চুক্তিভিত্তিক গাড়ি সংগ্রহের ব্যয়, প্রচার ও বিজ্ঞাপন এবং বইপত্র ও সাময়িকী। এ ছাড়া মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণ, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, ফটোকপিয়ার দুটির পরিবর্তে একটি এবং অফিস সরঞ্জাম খাতের ব্যয়। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে আগামী জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় প্রস্তাব দিয়ে শত শত কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে। দেখা যায় ইচ্ছা করেই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা যেসব কাজ দরকার নেই সেসব কাজ যুক্ত করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে প্রস্তাব তৈরি করেন। অতীতে এ রকম অপ্রয়োজনীয় অনেক প্রস্তাবই পাস হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বায়তুল মোকাররম মসজিদ উন্নয়নে যেসব কাজ দরকার সেগুলো করলে এত বেশি ব্যয় করতে হয় না। কিন্তু দেখা যায় আনুষঙ্গিক নানা কাজ যোগ করা হয়েছে। যে কাজগুলো না করলে কিংবা পরে করলেও চলে। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ বিষয়টি কেউ মাথায় রাখছেন না। এজন্যই এমন প্রস্তাব আসে। এজন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে।’
পিইসি সভায় জানানো হয়, রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টন এলাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদটি অবস্থিত। এই মসজিদে আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের পরিবেশ তৈরির জন্য উন্নয়ন ও সংস্কারে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। এর আওতায় উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হলোÑ মসজিদের পূর্ব ও উত্তর দিকে ৮০ ফিট উচ্চতাবিশিষ্ট গেট তৈরি করা। মসজিদের পশ্চিম দিকে ২০ ফিট এবং উত্তর দিকে ৩৩ ফিট ওয়ার্কওয়ে নির্মাণ করা। ৩০০ ফিট মিনার, চার তলাবিশিষ্ট অফিস ভবন, মসজিদে নামাজ আদায়ের বিভিন্ন অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানো এবং সাউন্ড সিস্টেমের উন্নয়ন করা। এ ছাড়া মসজিদের ভেতর ও বাইরে আলোকসজ্জার উন্নয়ন, লিফট সংযোজন, মসজিদের ভেতর শীতাতপ যন্ত্র (ভিআরএফ) স্থাপন, অডিটোরিয়ামের উন্নয়ন এবং মসজিদের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের কার পার্কিংয়ের সংস্কারসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ করা।
পিইসি সভায় অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের লগফ্রেম, পটভূমি, অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভিশন-মিশন সঠিকভাবে ডিপিপিতে বর্ণনা করা হয়নি। এজন্য এসব বিষয় সঠিকভাবে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় জনবল নিয়োগের জন্য জনবল কমিটির সুপারিশ নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি যানবাহন বিষয়েও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নেওয়া হয়নি।
প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পিএসসি (প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি) সভায় সদস্য এবং সম্মানি নির্ধারণের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারি খাতে ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন এবং সংশোধন নির্দেশিকা’ অনুযায়ী পিইসি (প্রকল্প ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) এবং পিএসসি গঠন করে বিধি অনুযায়ী সম্মানি ধার্যের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সভায় ভবন নির্মাণের বিষয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এ কমিটির মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, নিড অ্যাসেসমেন্ট এবং গণপূর্তের হালানাগাদ রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প প্রস্তাবে যে ক্রয় পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পিপিআর (সরকারি ক্রয় আইন) অনুসরণ করে ক্রয় পরিকল্পনা তৈরি করে তা ডিপিপিতে যুক্ত করতে বলা হয়েছে।
পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুম আরা বেগম বলেন, ‘প্রকল্পের একটি সুনির্দিষ্ট এক্সিট প্ল্যান তৈরি করতে হবে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অল্প সময়ের মধ্যেই পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগ করতে হবে।’