× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টার্গেট মূল‍্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

আরমান হেকিম

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৫ ১০:৪১ এএম

গ্রাফিক্স প্রবা

গ্রাফিক্স প্রবা

অর্থনীতির নানা সংকটের মধ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। খাদ্য নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারের বাজেটের সম্ভাব‍্য আকার হতে পারে ৮ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে ব‍্যক্তি করহার বাড়লেও কোম্পানির করহার কমানো হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ‍্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ আগামী বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। জুনের প্রথম সপ্তাহে নতুন বাজেট ঘোষণা হবে। 

প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকায় এ বছর সেটি হবে না। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

বাজেটের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেট যেন উচ্চাভিলাষী না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। আর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি ও সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বেশি না থাকায় আগামী বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়া উচিত। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদরা। বৈঠকে তারা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ভাতা কার্যকরভাবে বিতরণ, প্রয়োজনে টিসিবির কার্ডধারীর সংখ্যা ১ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ২০ হাজারে উন্নীত করা, ভালো গবেষণা করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও গবেষণা করতে প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করা, প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে হঠাৎ ব্যয় বৃদ্ধির বদলে সারা বছর গুরুত্বের সঙ্গে ব্যয়ের ব্যবস্থা করা, বাজেটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা, কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি পরামর্শ দিয়েছেন।

দুটি বাড়ি, দুটি গাড়ি ও ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি আছেÑ এমন আমানতকারীদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। গ্যাস খাতে কূপ খননে বাজেট বরাদ্দ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের (এসএমই) শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ঋণ পান, সে ব্যাপারে নীতি পদক্ষেপের সুপারিশ করেছেন।

এডিপির আকার কমতে পারে

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এডিপির বাস্তবায়ন মাত্র ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অর্থ বিভাগ মনে করছে, অর্থবছর শেষে এডিপির বরাদ্দের ১ লাখ কোটি টাকার বেশি অব্যবহৃত থেকে যেতে পারে। তাই আগামী বাজেটে বরাদ্দ যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা হচ্ছে।

রাজস্বের বিশাল বোঝা এনবিআরে

বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে আগামী অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে এবারই প্রথম করজাল সম্প্রসারণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য আয়করদাতাদের চিহ্নিত করা হবে। বাজেটে আয়কর খাত থেকে বেশি রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করা হবে। সূত্র জানায়, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য এনবিআরকে অন্তত ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হতে পারে। 

চলতি বাজেটে সংস্থাটির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে সংস্থাটি প্রায় ৫৭ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে। 

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৫ লাখ সুবিধাভোগী বাড়ছে

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর চলমান সব কর্মসূচির সুবিধাভোগী ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য আসছে বাজেটে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হবে। ভাতা ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এ ছাড়া সাতটি প্রধান কর্মসূচিতে প্রায় সোয়া ৫ লাখ নতুন সুবিধাভোগী যুক্ত হবেন বলে জানা গেছে।

বয়স্ক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হবে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের ভাতা ১০০ টাকা বাড়ছে আর প্রতিবন্ধীদের ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া হিজড়া, বেদে, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও চা শ্রমিকদের ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আগের বছরগুলোতেও ভাতার পরিমাণ বাড়িয়েছিল সরকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা বেড়েছিল ১০০ টাকা, আর বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের ভাতা ৫০ টাকা বাড়ানো হয়। অন্যদিকে, প্রতিবন্ধী ভাতা সবশেষ সমন্বয় করা হয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে, যখন তা ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হয়েছিল।

করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকতে পারে

আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই বলে জানা গেছে। তবে দেশের ব‍্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা সুপারিশ করেছেন করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করতে। মূল‍্যস্ফীতি বিবেচনায় এই সুপারিশ করেছেন তারা। 

অন‍্যদিকে ব্যক্তিশ্রেণির ন্যূনতম কর বাড়ানোর চিন্তা করছে এনবিআর। সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ন্যূনতম করের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে আমরা ভাবছি। তবে আমাদের ভাবনাই চূড়ান্ত না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর তা চূড়ান্ত হবে।

বর্তমানে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। পরবর্তী এক লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী চার লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ, অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ।

করছাড় কমানোর উদ‍্যোগ

আগামী বাজেটে করছাড় কমানোর উদ‍্যোগ নিয়েছে এনবিআর। প্রতিবছর যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা হয় তার প্রায় অর্ধেক কর রেয়াত বা ছাড়ের মাধ্যমে চলে যায়। এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় সংস্থাটি। 

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা অব্যাহতি সংস্কৃতি থেকে বের হচ্ছি। আমরা পণ করেছি, অব্যাহতি আর দেব না। অব্যাহতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। অব্যাহতি দিতে দিতে নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাত থেকে বের হতে পারছি না। আমাদের বদনাম হয়ে গেছে, রাজস্ব যা আদায় করি, তার সমপরিমাণ অব্যাহতি দিই।

বাজেটের আকার এবারও বাড়ছে

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্যও ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজেট দেওয়া হয়। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে, আগামী অর্থবছরের যে বাজেট বরাদ্দ ধরা হয়েছে, তা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে দেওয়া হয়েছিল চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সম্পদ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বৈঠকে আগামী অর্থবছরের জন্য ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের খসড়া তুলে ধরা হয়। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আকার খানিকটা কমানো হয়েছে। এটি এখন ৮ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। 

জানা গেছে, প্রতি বছর বাজেটের পুরো অর্থ ব‍্যয় না হওয়ায় এবার আকার কিছুটা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে কর্মসংস্থান বাড়ানো ও সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ব্যয় ৮ লাখ কোটি টাকার বেশিই ধরা হচ্ছে। কারণ অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করছে, সরকারি ব্যয় বিশেষত উন্নয়ন ব্যয় একেবারে কমে গেলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা