প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫ ১৩:১৪ পিএম
ছবি কোলাজ : প্রবা
রমজান মাসের প্রথমদিকে বাজারে চাল ও মাংসের দাম স্বাভাবিক থাকলেও, বর্তমানে বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, যা ক্রেতাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, মিনিকেট চাল এবং মুরগির মাংসের দাম বৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য খাদ্যব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চাল ও মাংসের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, যা ক্রেতাদের জন্য চাপ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া, শাকসবজি, ফলমূলসহ অন্যান্য পণ্যের দামেও কিছুটা বৃদ্ধি হয়েছে, তবে শাকসবজি এখনও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। রমজান মাসে দামবৃদ্ধির এই চিত্র ভোক্তাদের জন্য এক কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যেখানে খাদ্যতালিকায় আমিষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আরও বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
বর্তমান চালের বাজার
রমজানের শুরুর দিকে চালের দাম স্বাভাবিক থাকলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে এর দাম বাড়তে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। এতে করে খুচরা দোকানে রশিদ, ডায়মন্ড, সাগর ইত্যাদি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ৮৫ টাকা বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল। এটি বাজার ও স্থানভেদে ৯৮-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামও কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মেরাদিয়া, বাড্ডা, রামপুরা, জোয়ারসাহারা ও বসুন্ধরা বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর জোয়ারাসাহারা বাজারে দেখা যায়, গত সপ্তাহে মোজাম্মেল ৮৫ টাকা করে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ১০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও, মিনিকেট গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ৮০ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য চালের মধ্যে সুপার মিনিকেট ৭০ টাকা, পাইজাম ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল ৯০ ও পোলাওয়ের চিকন চাল ১৪০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে খোলবাজারের তুলনায় সুপারশপগুলোতে চালের দাম আরেকটু বেশি। বনশ্রীর ডেইলি শপিংয়ে দেখা যায়, মিনিকেট ৮২ টাকা, ডেইশি শপিং মিনিকেট ৮৬ টাকা, প্রাণ মিনিকেট ৯০ টাকা, নাজিরশাইল ৯২ টাকা, চিনিগুঁড়া ১২৫ টাকা কেজিপ্রতি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমিষের চাহিদায় টান
আমিষের চাহিদা মেটাতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে মুরগির মাংসের দাম কিছুটা কম থাকলেও চলতি সপ্তাহে তা কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর ভাটারা বাজারে ক্রেতা মোহাম্মদ আজম বলেন, রমজান মাসে ভালো-মন্দ খাব কই, তার চেয়ে টাকার কাটাছেঁড়ায় জীবন যাওয়ার উপক্রম। গরুর মাংস এ মাসে এখনও খেতে পারিনি। ব্রয়লার মুরগিই ভরসা। সেটিরও দাম বেড়ে গেছে।
এদিকে বাজারভেদে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা কেজিতে। সোনালি মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা, লেয়ার ৩২০ টাকা, দেশি ৬৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। গতকাল ভাটারা বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি, সোনালি মুরগি ৩০০-৩১০ করে বিক্রি হচ্ছে। আর গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। বাজারগুলোতে রুই মাছ আকারভেদে ২৫০ থেকে ৩৫০, পাঙাশ মাছ ১৮০ থেকে ২০০, গলদা চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ করে বিক্রি হচ্ছে।
শাকসবজির দাম অপরিবর্তিত
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে কিছু শাকসবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে দাম কমেনি লেবুর। গোলাকৃতি লেবুর দাম প্রতি হালি ১০০ টাকা, লম্বা আকৃতির লেবু ৫০ ও ছোট আকৃতির লেবুর হালি ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আলু কেজিপ্রতি ২৫, শসা ৪০, টমেটো ২০ থেকে ২৫, করল্লা ১২০, পটোল ১০০, চিচিঙ্গা ৭০, বেগুন ১১০, ফুলকপি পিস ৫০, শিম ৬০, মিষ্টিকুমড়া কেজি প্রতি ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
মেরাদিয়া কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, শিম ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, আলু ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজিপ্রতি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে আপেল-নাশপাতির দাম
এ ছাড়া ফলের বাজারে আপেল ও নাশপাতির দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত দুই সপ্তাহ আগে ৩০০ টাকা কেজি আপেল বিক্রি হয়েছে। এ সপ্তাহে ৫০ টাকা বেড়ে তা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নাশপাতি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়ে ৩৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ মৌসুমে আনারসে জোগান বেশি থাকলেও প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা করে। অন্যান্য ফলের মধ্যে বরই ৫০-৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, খেজুর মানভেদে ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, কমলা ৩২০ টাকা, ডাব প্রতি পিস ১৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।