হাসনাত শাহীন
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫ ১২:১৮ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ঈদ এসে গেল। কেনাকাটি চলছে জোরকদমে। ঈদের আনন্দের বড় অংশজুড়ে থাকে কেনাকাটি। নতুন পোশাক, উপহারসামগ্রী, সুস্বাদু খাবারÑ সব মিলিয়ে ঈদের বাজার হয়ে ওঠে জমজমাট। বিপণিবিতানগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই ক্রেতার ভিড় বাড়ছে। জামাকাপড়, জুতো, ব্যাগ সবই গুছিয়ে কিনতে হবে। কিন্তু সব তো হাতের কাছে মেলে না। তাই প্রিয়জনদের জন্য পছন্দের জামা, জুতাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র কিনতে রাজধানীর বসুন্ধরা-বারিধারা ও গুলশানের কাছাকাছি প্রগতি সরণিতে (কুড়িল বিশ্বরোডের নিকটে) অবস্থিত দেশের বৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কে ঢুঁ মারছেন ক্রেতারা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়Ñ প্রায় সব শ্রেণির ক্রেতারা ভিড় করছেন সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই শপিংমলে। ক্রেতারা শপিংমলের দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের শোরুম ঘুরে ঘুরে কিনছেন পছন্দের পণ্য। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মার্কেট ঘুরে দেখায় যায়Ñ সুবিশাল এই শপিংমলে ভিড় থাকলেও ক্রেতারা স্বচ্ছন্দে কেনাকাটা করছেন। তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বললে তারা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ‘এক ছাদের নিচে সববয়সি মানুষের জামাকাপড় ছাড়াও গয়না, কসমেটিকস, ক্রোকারিজ, জুতা, পারফিউমসহ সব ধরনের পণ্যসামগ্রী থাকায় এবং অনেক জায়গা হওয়ায় এখানে কেনাকাটা করাটা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের।’
প্রতিদিনের মতো গতকালও সকাল থেকেই ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয় যমুনা ফিউচার পার্কে। বিকালের দিকে সেই আনাগোনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শপিংমলের প্রবেশমুখেই গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। এ ভিড় শুধু রাজধানীবাসীদের নয়, এখানে ঈদ কেনাকাটা করতে ভিড় করছেন ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন অনেকে। আসবেই-বা না কেন, এই মার্কেটে যে দেশি-বিদেশি সব ব্র্যান্ডের পোশাক-আশাক থেকে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল সামগ্রীই পাওয়া যায়।
শপিংমলে রয়েছে দেশের প্রায় সব ফ্যাশন হাউসের বিক্রয় কেন্দ্র। ইনফিনিটি, লা রিভ, কে-ক্র্যাফট, নবরূপা, বিগ বস, ভিক্টর, সেলিব্রেশন, ইস্টেসি, ইয়োলো, দর্জিবাড়ি, ল্যান্ড, র ফ্যাশন, ক্যাপশন, অঞ্জন’স, আড়ং, জিন্স অ্যান্ড কোম্পানি, টুয়েলভ, রেড, জেন্টল পার্ক, টিন’স ক্লাব, প্লাস পয়েন্ট, কান্ট্রি বয়, রেঞ্জ, আর্টিসান, আর্টিশিয়ান, লাইভ, ইজি, টেক্সমার্ট, দ্য বডি সপ, ক্লাব হাউজ, টপ টেন’সহ অন্যান্য পোশাকের ব্র্যান্ডশপগুলোয় ছিল লক্ষণীয় ক্রেতাসমাগম।
ঘুরেতে ঘুরতে কথা হয় সানজিদা সাফা নামের গাজীপুর থেকে আসা এক তরুণীর সঙ্গে। তিনি ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’কে বলেন, ‘অনেক দিন ভেবে রেখেছিÑ এবার যমুনা ফিউচার পার্কে ঈদ শপিং করব। কারণ, এখানে দেশের নামিদামি সব ব্র্যান্ডের দোকান যেমন রয়েছে; তেমনই বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকও পাওয়া যায়।’
ইনফিনিটির শোরুমের বিক্রয় প্রতিনিধি ইসমাইল হোসেন ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’কে বলেন, ‘ঈদ যত এগিয়ে আসছে; মার্কেটে ভিড়ও বাড়ছে। আজ বৃহস্পতিবার; তবু যথেষ্ট ক্রেতা আছে, বিক্রিও হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে ভিড় আরও বাড়বে। আর ছুটির দিনগুলোতে সেই ভিড় উপচে পড়বে। কারণ, ছুটির দিনগুলোতে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষই প্রায় পুরো পরিবার নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। ফলে ছুটির দিনে বিক্রিও বাড়ে।’
ইফতারের পরে রামপুরা থেকে ঈদবাজার করতে এসেছিলেন একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ও লেখক আবু সাঈদ তুলু। তিনি বলেন, ‘আমরা সপরিবারের এসেছি। আজ এখনও কেনাকাটা করিনি। ঘুরে দেখছি। দারুণ এবং বৃহৎ শপিংমলÑ স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করার মতো স্থান। পাশাপাশি নিরাপত্তাও ভালো।’
শপিংমলের সার্বিক নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শপিংমলটির জেনারেল ম্যানেজার (মল অপারেশন) এস এম নূর-ই সাইফুল্লাহ বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা এবার নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছি।’ তিনি জানান, ‘এখানে শপিং করতে আসা মানুষের নিরাপত্তার জন্য ২৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত আছেন। তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কি না তা দেখভাল করতে ১০ জনের বিশেষ টিম রয়েছে। প্রায় ১ হাজার ২০০ সিসি ক্যামেরা রয়েছে পুরো শপিংমলে। এ ছাড়া যেকোনো চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ইত্যাদি রোধ করতে আমাদের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত।’
তিনি জানান, ‘শপিংমলের পাশাপাশি যমুনা ফিউচার পার্ক বিনোদনের একটি জায়গাও বটে। তাই শপিংমলের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়াও আমাদের এখানে দুটি দেশের দূতাবাস (ভিসা সেন্টার) রয়েছে। তাই আমরা চেষ্টা করেছি নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কীভাবে সাধারণ জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া যায়।’
এদিকে, এবারের ঈদ উপলক্ষে যমুনা ফিউচার পার্কে কেনাকাটা করলেই কোটি টাকা পর্যন্ত উপহার জেতার সুযোগ করে দিয়েছে যমুনা গ্রুপ। এর আওতায় এবারে যমুনা ফিউচার পার্কের যেকোনো শোরুম থেকে ন্যূনতম ২ হাজার টাকার কেনাকাটা করলেই থাকছেÑ টিভি, ফ্রিজ, ইলেকট্রনিকস ও ইলেকট্রিক পণ্যসহ নানান ধরনের আকর্ষণীয় সব উপহার। চাঁদরাত পর্যন্ত থাকবে এই উপহার জেতার সুযোগ। ক্রেতারা যাতে সহজে উপহার পেতে পারেন, সেজন্য শপিংমলের সেন্টার কোর্টে গিফটের পৃথক বুথ করা হয়েছে। পণ্য ক্রয়ের রসিদ নিয়ে সেখানে থাকা কিউআর কোড দিয়ে তথ্য দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা উপহার জিতলে বুথ থেকে সংগ্রহ করতে পারছেন। এতে ক্রেতাদের ঈদ আনন্দে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।
প্রসঙ্গত, যমুনা ফিউচার পার্ক প্রায় ৪১ লাখ বর্গফুট আয়তনজুড়ে বহুতল বিশিষ্ট বিপণি কেন্দ্র। যা দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল হিসেবে পরিচিত। যমুনা বিল্ডার্স লিমিটেড ২০০২ সালে এই স্থাপনাটি তৈরির কাজ শুরু করে এবং ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়।