প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫ ২১:৪১ পিএম
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫ ২১:৪১ পিএম
দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধা দিতে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার। এগুলোকে নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্ট (এনএফএ) বলা হয়। গত ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংক হিসাবে আমানত দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবে জমা বেড়েছে ২২০ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য ওঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাস আগেও দেশে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। তবে এরপরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংকট কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। আর এতেই দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। এর ফলে স্বল্প আয়ের মানুষও ব্যাংকে টাকা রাখতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে ঠিক করতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকে আমানত ফিরতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকা দিয়ে খোলা স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। আর ডিসেম্বর শেষে এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকা দিয়ে খোলা হিসাবে আমানত বেড়েছে ৪০৩ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭৮ লাখ ৭১ হাজার ৮৭৮টি। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮১ লাখ ২৩ হাজার ৩৯০টি। সেই হিসাবে তিন মাসে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৫১২টি।
এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এসব হিসাবের মাধ্যমে আসা মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ৭৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকাÑ যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্সের তুলনায় ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নো ফ্রিলস হিসাবের আওতায় কৃষকদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৬৪০ কোটি, অতি দরিদ্রদের ২৪৩ কোটি, পোশাক শ্রমিক ৩৬০ কোটি, মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাবে ৮৮৪ কোটি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের হিসাবে ১ হাজার ৫৫১ কোটি ও অন্যান্য খাতে ৫৯৯ কোটি টাকাÑ যা ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের আমানত পরিমাণ ৭৩০ কোটি, অতি দরিদ্রদের ২৪৮ কোটি, পোশাক শ্রমিক ৩৬৭ কোটি, মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাবে ৯১৩ কোটি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের হিসাবে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা।
২০১০ সালে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধা দিতে নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্টস খোলার সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার। এসব অ্যাকাউন্টের ন্যূনতম সার্ভিস চার্জ বা ফি নেই। সমাজের সব স্তরের মানুষের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কৃষক ছাড়াও এসব হিসাবের আওতায় থাকেন পোশাক শ্রমিক, অতি দরিদ্র মানুষ, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীরাসহ অনেকে। এর মধ্যে কৃষকদের হিসাব ও আমানত সবচেয়ে বেশি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার পালাবদলের পর ব্যাংক খাত নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তখন ব্যাংক শতভাগ সিকিউরড খাত হবে কিনা, এমন দ্বিধায় অনেকে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়েছিলেন। সে সময় এসব হিসাব থেকেও আমানত তুলে নেওয়া হয়। সরকার পতনের পর ব্যাংকগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ এ খাত নিয়ে আবার আস্থা তৈরি হয়।