প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫ ২২:০১ পিএম
স্কুল ব্যাংকিং নীতিমালার আওতায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অধিকতর সম্পৃক্ত করতে আবারও তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রবিবার (১৬ মার্চ) এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ বাংলাদেশে আর্থিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হবে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর ও ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বরের দুটি সার্কুলারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছেÑ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আর্থিক সেবার সাথে পরিচিত করানো এবং তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ডে অধিকতর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক শাখার নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে স্কুল ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংককে তাদের প্রতিটি শাখার নিকটবর্তী কমপক্ষে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং সেবা-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এ নীতির আওতায় কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছেÑ জেলা বা উপজেলা অথবা ইউনিয়ন পর্যায়ে কমপক্ষে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনপূর্বক প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক শাখাকে তাদের নিকটবর্তী শাখার মাধ্যমে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি সেই ব্যাংকের শাখা থেকে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা বা পরিষেবা গ্রহণ করার সুযোগ পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের বিষয়ে অধিক্রমণ দূরীকরণে ব্যাংকগুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। হিসাব খোলা ও পরিচালনা, আর্থিক শিক্ষা ও এতদ্বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতনতা এবং প্রযুক্তিগত বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলা বা উপজেলার স্কুল ব্যাংকিং-সংক্রান্ত কার্যক্রমের বিষয়ে ব্যাংক শাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট অফিসকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অবহিত ও প্রতিবেদন দাখিল করবে। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের অগ্রগতি (ব্যাংক শাখা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, শিক্ষার্থী হিসাবের সংখ্যা, লেনদেনের পরিমাণ এবং আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রমের বিবরণসহ) সম্পর্কে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারির এফআইডি সার্কুলার অনুযায়ী ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টে প্রতিবেদন দাখিলসহ স্কুল ব্যাংকিং-সংক্রান্ত অপরাপর নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা ও তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের আরও উপযোগী করে তোলা। ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়। এরপরের বছর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোতে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব ও আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমে এসেছে। এরপর থেকেই স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে।
এ পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এই অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন সব ধরনের ফি ও চার্জের ক্ষেত্রে রেয়াত পাওয়া, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ। মাত্র ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
স্কুল ব্যাংকিংয়ে বেড়েছে আমানত
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়। তবে গত ডিসেম্বরে কিছুটা উন্নতি হয়েছে স্কুল ব্যাংকিংয়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে স্কুলশিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭১ কোটি টাকা। এটি তার আগের মাস নভেম্বরে ছিল ২ হাজার ৪১ কোটি। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ৩০ কোটি টাকা। তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানতের স্থিতি ছিল ২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমানতের স্থিতি কমেছে ১০৮ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা, এটি তার পরের মাস আগস্টে কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ১৭২ কোটিতে। সেপ্টেম্বরে আরও কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকায়, অক্টোবরে কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৮৭ কোটি এবং নভেম্বরে কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪১ কোটি টাকায়। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে আমানত কমলেও ডিসেম্বরে এসে কিছুটা বেড়েছে।
স্কুল ব্যাংকিং নীতিমালার আওতায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অধিকতর সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আর্থিক সেবার সঙ্গে পরিচিত করা এবং তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ডে অধিকতর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি ব্যাংক শাখার নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্কুল ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার নীতি গ্রহণ করেছে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে কার্যরত সব ব্যাংককে তাদের প্রতিটি শাখার নিকটবর্তী কমপক্ষে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং সেবা-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।