প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৬:৫৩ পিএম
উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বর্তমানে একজন করদাতার করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা।
রবিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক মুনতাসীর কামাল ও সাঈদ ইউসুফ শাদাৎ প্রমুখ।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি। এছাড়া শহরের চেয়ে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। আগামী অর্থবছর এটি বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন শেষে মূল্যস্ফীতির হার ৭-৮ শতাংশে এ নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনার কথা বলেছে, সেটি অর্জন করা অসম্ভব।
রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে জানিয়ে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২৫ অর্থবছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি যদি দেখি, সেটি খুবই দুর্বল। এই সময়কালে রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। গত বছরের আদায় যেহেতু কম হয়েছে, সেই ঘাটতি এবং এ বছরের জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাকি সময়ে পূরণ করা আসলে প্রায় অসম্ভব বিষয়। আমরা মনে করি, বাকি অর্থবছরে আরো যেসব জায়গায় থেকে কর আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় রেখেও আমরা যদি হিসাব করি, বছর শেষে বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা পৌঁছাতে পারে।
তিনি বলেন, ২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এটা ২৪ অর্থবছরের তুলনায় একটু বেশি। অন্যদিকে আমরা দেখি, ২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার কমে গেছে। জুলাই-ডিসেম্বরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২৯ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। যা ২০২৪ এর একই সময়ে অনেক কম ছিল।
এনবিআর এবং কর ব্যবস্থার সংস্কারে সুপারিশের বিষয়ে ফাহমিদা তার প্রস্তাবনায় বলেন, এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং নীতি, প্রশাসনিক ও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এনবিআর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে দুটি পৃথক বিভাগের প্রস্তাব করা হয়েছে যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের জন্য আইএমএফের শর্তগুলির মধ্যে একটি ছিল নীতি এবং বাস্তবায়ন পৃথক করা। এমন উদ্যোগ নীতি-স্বাধীনতা এবং নীতি-সারিবদ্ধতা উভয়কেই উন্নত করবে এবং কর ব্যবস্থার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করবে। যেখানে বর্তমানে সিস্টেম রাজস্ব সংগ্রহের ওপর প্রধান ফোকাস দেওয়া হয়।
সিপিডি বলছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এনবিআর এবং কর ব্যবস্থার সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ রিসোর্স মোবিলাইজেশনে (ডিআরএম) বাংলাদেশের দুর্বল পারফরম্যান্স দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন কর-জিডিপি অনুপাতের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। এই পটভূমিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের উদ্যোগে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে উপদেষ্টা কমিটি একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং তা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রস্তাব ছিল- রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ নামের দুইটি পৃথক বিভাগ করা। যেখানে ট্যারিফ যৌক্তিককরণ, পরিকল্পনা, বাণিজ্য ও শিল্প নীতি এবং দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশলের সাথে সিস্টেমটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নিশ্চিত করা কর নীতি বিভাগের কাজ হবে। নীতি বিভাগের কাজ এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যাতে এটি শুধু রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
ফাহমিদা বলেন, দেশের কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিআরএম ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করতে এবং একবিংশ শতাব্দীর চাহিদার সঙ্গে কর ব্যবস্থাকে উন্নতি করার জন্য দুই বিভাগেই উদ্যোগ প্রয়োজন। রাজস্ব সংগ্রহের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং কর ব্যবস্থার অটোমেশন, ডিজিটালাইজেশন এবং আধুনিকীকরণে এটা ইতিবাচক হিসেবে কাজ করবে।
সিপিডির প্রস্তাবে করদাতা-বান্ধব এবং কার্যকর করার জন্য নতুন আয়কর আইন ২০২৩ এর কিছু বিধানের বিষয়ে পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- অহেতুক অডিট, টিডিএস রিপোর্ট এবং কোম্পানির সংজ্ঞায় পরিবর্তন প্রয়োজন। এছাড়াও কর আহরণের নতুন উপায়, বিশেষ করে ডিজিটাল অর্থনীতিতে কর আরোপের গুরুত্ব এবং সম্পদ কর এবং উত্তরাধিকার কর প্রবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এলএনজি আমদানির পরিবর্তে দেশের গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমাতে হবে। এসএমই সুযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।