প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫ ১৯:২৬ পিএম
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫ ১৯:২৬ পিএম
বাংলাদেশ সরকার দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ এবং গতিশীল করার উদ্দেশ্যে নতুন জাতীয় রাজস্ব নীতি বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে ৫৩ বছরের পুরোনো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত হয়ে নতুন কাঠামো গঠন করা হবে। এনবিআরের খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা দুটি পৃথক বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই কাঠামোটি দেশের রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।
নতুন কাঠামোর অধীনে, রাজস্ব নীতি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে। অর্থাৎ এককভাবে কোনো ব্যক্তি নিয়োগ বা ওএসডি হওয়া সম্ভব হবে না। বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সদস্যরা শুধু রাজস্ব নীতি ও গবেষণায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে নিয়োগ পাবেন। সদস্যদের মধ্যে আয়কর, শুল্ক, মূসক, ভ্যাট নীতি প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং তাদের বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডার থেকে নির্বাচন করা হবে।
বর্তমানে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব একই ব্যক্তি হওয়ায় কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি হয়। নতুন কাঠামোতে রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আলাদা আলাদা বিভাগ হিসেবে কাজ করবে, যার ফলে এক বিভাগের কাজ অন্য বিভাগের কাজকে প্রভাবিত করবে না। এতে রাজস্ব সংগ্রহ আরও স্বচ্ছ এবং প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হবে।
এনবিআরের খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাজস্ব নীতি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রশাসন, আর্থিক উন্নয়ন এবং সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন এবং তিনি বোর্ড সদস্যদের কার্যক্রম তদারকি করবেন। এর মাধ্যমে বোর্ডের কার্যক্রম আরও গতিশীল এবং স্বচ্ছ হবে। এ ছাড়া বোর্ডের কার্যক্রমের সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে এবং এর মাধ্যমে দেশের রাজস্ব নীতির ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
এনবিআরের বর্তমান কাঠামোতে যে অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং জটিলতা রয়েছে, তা দূর করতে এই নতুন কাঠামো সহায়ক হবে। বর্তমানে, এনবিআরের চেয়ারম্যান এবং আইআরডি সচিব এক ব্যক্তির অধীনে থাকার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। নতুন কাঠামোতে এই দুটি বিভাগ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করবে, যা একে অপরকে সহযোগিতা করে কিন্তু কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে না।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, নতুন অধ্যাদেশ ঈদের আগেই উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে এবং নতুন অর্থবছরের প্রথম থেকেই কার্যক্রম শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনের ফলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সহায়তা করবে। তবে এটি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, কারণ কিছু আগের অভ্যন্তরীণ স্বার্থের সংঘাত রাজস্ব ব্যবস্থায় এখনও বিদ্যমান। সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী জানান, রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগ দুটি পৃথক করার মাধ্যমে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থার দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
এনবিআর সংস্কারের পরামর্শক কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে যে, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগে অস্ট্রেলিয়ার মডেল অনুসরণ করা উচিত, যেখানে সার্চ কমিটি প্রার্থীদের নির্বাচন করে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলের পছন্দের ব্যক্তির মাধ্যমে এই পরিবর্তন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হবে।