প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫ ১৪:৩৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
এবার মেঘনা, এনআরবি ও এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংকে উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে থেকে পরিচালক এবং সাবেক ব্যাংকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টদের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন। তবে পর্ষদ ভেঙে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের কোনো কারণ বলেননি।
চতুর্থ প্রজন্মের এসব ব্যাংক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এ দফায় সরকারে আসার প্রথম মেয়াদে অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১২ সালে একসঙ্গে অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের মধ্যে ছিল মেঘনা, এনআরবি ও এনআরবিসি ব্যাংক। এগুলোর উদ্যোক্তা হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা এবং বিদেশে ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা ও অনুসারী প্রবাসীরা।
পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগ পর্যন্ত মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান ছিলেন এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন পারভেজ তমাল।
ক্ষমতার পালাবদলের পর এর আগে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এই তিন ব্যাংকে নতুন পর্ষদ ঠিক করে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেছেন, বৃহস্পতিবার এগুলোর পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এবং ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নতুন পর্ষদে কারা এসেছেন তাদের পরিচয় জানা গেছে।
মেঘনা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার উজমা চৌধুরী, প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে (ক্যাসিওপিয়া ফ্যাশন লিমিটেডের পক্ষে) তানভীর আহমেদ, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. মামুনুল হক ও মো. রজব আলী, যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম (বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত), প্রাইম ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মো. আলি আকতার রিজভীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এনআরবি ব্যাংকের নতুন পর্ষদে পরিচালক হিসেবে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা শেয়ারধারক ইকবাল আহমেদ ওবিই, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ফেরদৌস আরা বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শেখ মো. সেলিম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মতিউর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক শরীফ নূরুল আহকাম এবং চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মিজানুর রহমান স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
অপরদিকে এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়াকে। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আবুল বশর ও মো. আনোয়ার হোসেন, সোনালী ব্যাংকের সাবেক উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শফিকুর রহমান, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অধ্যাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহকে দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকখাত সংস্কারে শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে বসানো হয় আহসান এইচ মনসুরকে।
তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করে দেন। তার মধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল ইসলামী ব্যাংকসহ আটটির পর্ষদ। অন্যগুলো আগের সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সুবিধাভোগীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এর আগে গভর্নর আহসান মনসুর সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসব ব্যাংক থেকে একক পরিবার ৮৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছে যার সবগুলো এখন খেলাপি।